ইসরাইলি যোদ্ধাদের রিক্রুট করতে চায় ইউক্রেন

রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ে যুদ্ধে সক্ষম ইসরাইলিদের রিক্রুট করতে চায় ইসরাইলের ইউক্রেনীয় দূতাবাস। শনিবার থেকে ইসরাইলে ইউক্রেনীয় দূতাবাস রুশ সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ইসরাইলেও লোক নিয়োগ শুরু করেছে বলে টাইমস অফ ইসরাইলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

ইউক্রেনীয় ভাষায় লেখা একটি ফেসবুক পোস্টে দূতাবাস জানায়, রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুকদের তালিকা গঠন শুরু করেছে দূতাবাস। পরে টাইমস অফ ইসরাইল এই পোস্টের একটি ইংরেজি স্ক্রিনশট প্রকাশ করে।

পোস্টে আরও বলা হয়, যারা রুশ সামরিক আক্রমণ থেকে ইউক্রেনের সুরক্ষার লড়াইয়ে যোগ দিতে ইচ্ছুক তারা যেন সামরিক অভিজ্ঞতার প্রমাণসহ তাদের ব্যক্তিগত তথ্য পোস্টে দেওয়া ই-মেইলে পাঠায়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দূতাবাসের পক্ষ থেকে পোস্ট দেওয়ার আগেই ইসরাইলে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ইউক্রেন সেনাবাহিনীতে স্বেচ্ছাসেবক হওয়া ইসরাইলিদের জন্য বৈধ।

যদিও ইসরাইলি আইনে দেশটির নাগরিকদের বিদেশি সামরিক বাহিনীতে কাজ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পরে ইউক্রেনের দূতাবাস পোস্টটি সরিয়ে ফেলে। পোস্ট ডিলিট করার কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি ইউক্রেনীয় দূতাবাস।

ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা দূতাবাসের পোস্টটি মুছে ফেলার আগেই এ সম্পর্কে অবগত হয়েছে। তবে ইসরাইলের অনুরোধে পোস্টটি সরানো হয়েছিল কি না- এমন প্রশ্নের উত্তর দেয়নি মন্ত্রণালয়।

গত সপ্তাহে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধের ডাক দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন ভলোদিমির জেলেনস্কি।

কিন্তু এসব ছাপিয়েও তাকে আরও একটু ব্যাতিক্রম দৃষ্টিতে দেখছে ইহুদিরা। রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ায় তাকে এ যুগের ‘ইহুদি বীর যোদ্ধা’ আখ্যা দিচ্ছে ইসরাইলের জনগণ।

ইউক্রেনে চলমান রাশিয়ার অভিযানকে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হিসাবে দেখছে বিশ্বের ইহুদিরা। যেমনটা খ্যাতনামা বামপন্থি ইহুদি লেখক ও চিত্রশিল্পী মলি ক্রাবাপলের কথায়ও উঠে এসেছে।

রুশ হামলার পর রাজধানী কিয়েভ থেকে ইউক্রেনের জনগণের উদ্দেশে দেওয়া জেলেনস্কির এক বক্তব্যের পর এক টুইটবার্তায় মলি বলেন, এই মুহূর্তে একজন ইহুদি হিসাবে জেলেনস্কির সাহস,

আত্মমর্যাদা ও তেজস্বিতায় গর্ব অনুভব না করে উপায় নেই। খ্যাতনামা ইহুদি লেখক পিটার ফক্স বলেছেন, ‘জেলেনস্কি আধুনিক যুগের ম্যাকাবি।

পিটার ম্যাকাবি বলতে প্রাচীন এক ইহুদি বীর নেতাকে বুঝিয়েছেন যিনি শক্তি ও সামর্থ্যে পিছিয়ে থেকেও ক্ষমতালিপ্সু এক বিদেশি শাসকের হানাদার যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন।

জেলেনস্কি একজন ইহুদি। তার দাদারা ছিলেন চার ভাই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রাশিয়ার রেড আর্মির পক্ষে জার্মানির হিটলারের নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে বাবার সঙ্গে লড়াইয়ে যান তারা।

ইহুদিবিরোধী ওই যুদ্ধে বাবা ও তিন ভাইকে হারিয়ে একাই বেঁচে ছিলেন জেলেনস্কির দাদা স্যামওয়োন ইভানোভিচ জেলেনস্কি। পরিচিতরা বলেন, দাদা স্যামওয়োনই জেলেনস্কির জীবনপথের আদর্শ।

২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেওয়ার পর পরই ছুটে যান পৈতৃক বাড়ি ক্রিভি রিহতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্র বাহিনীর কাছে নাৎসি জার্মানির আত্মসমর্পণের দিনকে স্মরণ করে উদ্যাপিত ভিক্টরি ডেতে (৯ মে) দাদার কবরে শ্রদ্ধা জানান। হলোকাস্ট দিবস উদ্যাপনে ১৯২১ সালে ইসরাইল সফরেও যান প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি।

তার বেশির ভাগ আত্মীয়স্বজনই থাকেন ইসরাইলে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পর ইউক্রেন ছেড়ে চলে যান তারা। হয়তো এসব যোগসূত্রেই রুশ হামলার পরিপ্রেক্ষিতে জিলেনস্কির সবচেয়ে বেশি সমর্থন দেখা যাচ্ছে ইসরাইলে। কয়েকদিন ধরেই নিয়ম করে দেশটির রাজধানী তেল আবিবে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হচ্ছে। বিক্ষোভে ‘জিলেনস্কি, জিলেনস্কি’ বলে স্লোগান উঠছে।