কারোনাকালীন সময়ে স্বাস্থ্য সহকারীদের বরাদ্দ প্রায় ৩০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মীর আবু মাউদের বিরুদ্ধে। তার অত্যাচারে এক শহীদ পরিবারের সন্তান চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। শুধু তাই নয়, তার বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা দূর্নীতির অভিযোগ করা হয়েছে। এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থাসহ স্বাস্থ্য সহকারীদের রক্ষার আবেদন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, করোনার সময় স্বাস্থ্য সহকারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোগিদের সেবা করেছেন। সম্মুখসারীর যোদ্ধা হিসেবে সরকার স্বাস্থ্য সহকারীদের স্বীকৃতি দিয়েছে। করোনাকালীন সময়ে স্বাস্থ্য সহকারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আক্রান্ত রোগিদের সেবা করেছেন। সাধারণ মানুষের করোনা টিকা নিতে উদ্বুদ্ধসহ টিকা দিয়েছেন। অথচ এসব স্বাস্থ্য সহকারীদের বিভিন্নভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে যশোর সদর উপজেলায়।
সূত্র জানায়, ২০২১ সালে করোনা উপলক্ষে সরকার হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ড গ্লোবস, পিপিইসহ সংশ্লিষ্ট খাতে সরকার বরাদ্দ কোন টাকা স্বাস্থ্য সহকারীদের দেওয়া হয়নি। ২০২২ সালে সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে ৪৫টি ওয়ার্ডে সরকার যে অর্থ দেয় সেখান থেকে ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন ডা: মীর আবু মাউদ। আবার যে সব ওয়ার্ডে টিকাদান কর্মী হিসেবে স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যাণ সহকারীরা এসে টিকা দিয়েছে তাদের কোন টাকা দেওয়া হয়নি। ডাটা এট্রি অপারেটর ও সুপার ভাইজাররা টিকাদানের দিনের কোন প্রাপ্য পায়নি। ভ্যাকসিন পরিবহনের পোর্টাররা দিন-রাত কাজ করে তাদের শ্রমের মূল্য পায়নি। সদর উপজেলায় একটি স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র রয়েছে। এই কেন্দ্রে একজন পুরুষ ও একজন মহিলা দায়িত্ব পালন করছেন। তারা রোষ্টার অনুযায়ী টিকার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এই কেন্দ্রের বরাদ্দ টাকা স্বাস্থ্য সহকারীদের বঞ্চিত করা হয়েছে। টিকা প্রদানের জন্য মাইকিং করার নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি। মাইকিং খরচ বাবদ সব টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে স্বাস্থ্য কর্তা।
সূত্র জানায়, যশোর সদর উপজেলায় প্রতিটি ইউনিয়নে ১২ দিন টিকার কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে স্বাস্থ্য সহকারী, পরিবার কল্যাণ সহকারী ও স্বেচ্ছাসেবকসহ ১৫ জন কাজ করেছে। এখাতের বরাদ্দের ৮০ ভাগ টাকা যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মীর আবু মাউদ নিজে আত্মসাৎ করেছেন। প্রতিটি ইউনিয়নের ইপিআই কেন্দ্রে আটটি সেশনে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ ১৬ দিন কাজ হয়েছে। এখাতে স্বাস্থ্য সহকারী ও স্বেচ্ছাসেবকদের মোট পাওনা ২৪ হাজার ৮০০ টাকা। কিন্তু দেওয়া হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। আর এভাবে ৪৫টি ওয়ার্ড থেকে চার লাখ ৪১ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
সূত্র জানায়, ২০২০ সালে হাম ক্যাম্পেইনের স্বাস্থ্য সহকারীদের বরাদ্দের অর্ধেক টাকা আত্মসাৎ করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মীর আবু মাউদ। এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে মাইকিং বাবদ ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও মাইকিং না করে নিজে পকেস্থ করেছেন। দেশে প্রতি ছয় মাস অন্তর ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন পরিচালিত হয়। সেখানে মাইকিংসহ বিভিন্নখাতে বরাদ্দের টাকা আত্মসাত করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
সূত্র মতে, গত বছর (২০২১) পুষ্টি প্রোগ্রামের আওতায় অফিসের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারিদের জন্য ঈদ উপহার হিসেবে সেমাই, চিনি, তেলসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি প্যাকেট করে কর্মচারিদের হাতে দিয়ে ছবি তোলা হয়। এরপর ওই পণ্য সামগ্রি কর্মচারিদের কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হয়। বলা হয়, পরে দেওয়া হবে। এরপর সেই ছবি ফেসবুকে আপলোড করা হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই পণ্য সামগ্রি কোন কর্মচারী পায়নি। শুধু তাই নয়, শীতের সময় উপজেলা পরিষদ থেকে স্বাস্থ্য সহকারীদের জন্য কম্বল এনে বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মীর আবু মাউদ নিজে।
সূত্র জানায়, এনসিডিসহ বিভিন্ন ট্রেনিং সরকারি ব্যাগ, পেনড্রাইভ, কলম বরাদ্দ দিলেও সেগুলো কোন স্বাস্থ্য সহকারীদের দেওয়া হয়না। দুপুরে খাবারে হিন্দু-মসলমান সকলকে গরুর মাংস খাওয়া বাধ্যতামূলক করেন। ৭ দিনের ট্রেনিং করা হলেও ৫ দিনের টাকা দিয়ে বাকী টাকা আত্মাসাৎ করেন। তার অত্যচারে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান স্বাস্থ্য সহকারী আলতাফ হোসেন চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
শুধু তাই নয়, হত্যা মামলায় জেল খাটা আসামিকে নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন এই স্বাস্থ্য কর্তা। ঢাকা ডিবি পুলিশ একটি হত্যা মামলায় স্বাস্থ্য সহকারী মহিউদ্দিন ফেরদৌসকে গ্রেফতার করে। ওই মামলায় চলতি বছরের ১৮ মে থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত তিনি কারাগারে ছিলেন। তিনি কারাগারে থেকে নিয়তি বেতনভাতা নিয়েছেন। কোন সরকারি কর্মচারি জেল হাজতে গেলে তাকে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের জানাতে হয়। কিন্তু মহিউদ্দিন ফেরদৌসের বেলায় এ নিয়ম মানা হয়নি।
সব অভিযোগ অস্বীকার করে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মীর আবু মাউদ বলেন, কতিপয় স্বাস্থ্য সহকারীরা ঠিকমত অফিস করেন না। তাদেরকে ঠিকমত অফিস করার জন্য চাপ দেওয়া হলে তারা এসব অভিযোগ করেছে। করোনাকালীন সময়ে স্বাস্থ্য সহকারীদের জন্য যে সব বরাদ্দ এসেছে তা তাদের দেওয়া হয়েছে। ফলে কোন স্বাস্থ্য সহকারীর আর্থ আত্মসাৎ করার প্রশ্নই ওঠে না। কারো সুযোগ সুবিধা দিতে পারি না। সকল কর্মচারী আমার কাছে সমান।