বদলে গেছে বিশ্বে অস্ত্র রপ্তানির হিসাবনিকাশ

ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বদলে গেছে বিশ্বের অস্ত্র রপ্তানির হিসাবনিকাশ। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক রাশিয়ার অবিশ্বাস্য পতন ঘটেছে। আরও চাঙ্গা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার। রাশিয়ার স্থান দখল করতে শুরু করেছে ফ্রান্স। সমরাস্ত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠেছে চীন। আমদানিকারক দেশের তালিকায় ওপরের দিকে উঠে এসেছে আগ্রাসনের শিকার ইউক্রেন। সোমবার দ্য স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পর থেকেই ইউরোপের দেশগুলো অস্ত্র আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছে। আগ্রাসনের পর থেকে অস্ত্র আমদানি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে ইউক্রেন। অস্ত্র আমদানিতে বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে পৌঁছে গেছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে ইউরোপের দেশগুলো অস্ত্র আমদানি বাড়িয়েছে ৪৭ শতাংশ। অন্যদিকে ইউরোপের ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো ওই পাঁচ বছরে অস্ত্র আমদানি বাড়িয়েছে ৬৫ শতাংশ। তবে এ সময় বিশ্বব্যাপী আমদানি সার্বিকভাবে ৫ শতাংশের বেশি কমেছে।

সমরাস্ত্র রপ্তানি নিয়ে গবেষণা চালানো সংস্থাটির প্রধান গবেষক পিটার ডি ওয়েজম্যান বলেছেন, বিশ্বব্যাপী অস্ত্র স্থানান্তর কমেছে। তবে, রাশিয়ার সঙ্গে উত্তেজনার জন্য ইউরোপে স্পষ্টভাবে আমদানি বেড়েছে।

সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র রপ্তানি তীব্রভাবে বাড়লেও সর্বশেষ বছরে ওয়াশিংটন অন্য চারটি দেশে রপ্তানি বেশি করেছে। ২০২২ সালে ওয়াশিংটন যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র রপ্তানি করেছে তার মধ্যে সবার ওপরে রয়েছে কুয়েত। এরপর রয়েছে যথাক্রমে সৌদি আরব, কাতার ও জাপান।

সর্বশেষ পাঁচ বছরে অস্ত্র রপ্তানিতে সবার ওপরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই সময়ে মোট বৈশ্বিক অস্ত্র রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবদান ছিল ৪০ শতাংশ। যা আগে ছিল ৩৩ শতাংশ। অন্যদিকে মোট বৈশ্বিক অস্ত্র রপ্তানিতে রাশিয়ার অবদান ২২ শতাংশ থেকে কমে ১৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। পাঁচ বছরে তাদের রপ্তানি আয় প্রায় ৩১ শতাংশ কমেছে।

অস্ত্র রপ্তানিতে রাশিয়ার পরই রয়েছে ফ্রান্স। মোট বৈশ্বিক অস্ত্র রপ্তানিতে দেশটির অবদান ১১ শতাংশ, যা আগে ছিল সাত দশমিক এক শতাংশ। গত ৫ বছরে ফ্রান্সের রপ্তানি বেড়েছে ৪৪ শতাংশ। দেশটির অস্ত্র রপ্তানি বেড়েছে এশিয়া প্যাসিফিক ও মধ্যপ্রাচ্যে। ভারত, কাতার এবং মিসর ছিল সবচেয়ে বড় ক্রেতা। ২০২২-এর শেষ নাগাদ রাশিয়ার চেয়ে বেশি অস্ত্রের অর্ডার পেয়েছে ফ্রান্স।

২০২২ সালে রাশিয়ার অস্ত্র কেনার দিক থেকে সবার ওপরে ছিল মিসর। বিপুল পরিমাণে যুদ্ধবিমান কেনার অর্ডার দিয়ে রেখেছে দেশটি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের চাপে মিসর ২০২২ সালে যুদ্ধ রুশ যুদ্ধবিমানের একটি বড় অর্ডার বাতিল করেছে।

এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে অস্ত্র আমদানি বেড়েছে। দেশ দুটির আমদানি বেড়েছে যথাক্রমে ৬১ ও ১৭১ শতাংশ। এদিকে বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীনও অস্ত্র আমদানি বাড়িয়েছে। আগের থেকে তাদের আমদানি বেড়েছে চার দশমিক এক শতাংশ। এ আমদানির বেশির ভাগই এসেছে রাশিয়া থেকে। চীন রাশিয়ার আমদানির ওপর কম নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। এটি উন্নত প্রধান অস্ত্রের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়িয়েছে।

১৯৯২ সাল থেকে জঙ্গিবিমান এবং যুদ্ধ হেলিকপ্টার রাশিয়ার প্রধান রপ্তানি ছিল। এটি ২০১৮-২২ সালে এর মধ্যে মোট ৩২৮টি জঙ্গিবিমান এবং যুদ্ধ হেলিকপ্টার সরবরাহ করে। এটা এই সময়ের মধ্যে আয়ের দিক থেকে রাশিয়ার অস্ত্র রপ্তানির ৪০% ছিল। তবে ২০২২ সালের শেষ নাগাদ দেশটির কাছে মাত্র ৮৪টি যুদ্ধবিমান এবং যুদ্ধ হেলিকপ্টারের অর্ডার ছিল।

এ সময় বিশ্বব্যাপী অর্ডার করা সব যুদ্ধবিমান এবং হেলিকপ্টারের প্রায় ৬০% যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে। শুধু ২০২২ সালে ১৩টি দেশ মার্কিন নির্মাতাদের কাছ থেকে ৩৭৬টি যুদ্ধবিমান এবং হেলিকপ্টার কেনার অর্ডার করেছে। বিশ্বের পাঁচটি বৃহত্তম প্রতিরক্ষা সামগ্রী রপ্তানিকারক যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স, চীন এবং জার্মানি সব অস্ত্র রপ্তানির তিন-চতুর্থাংশের (৭৬%) বেশি নিয়ন্ত্রণ করে।