যশোরে রমজান মাস জুড়ে ভিন্নধর্মী বাজার

যশোরে পুরো রমজান মাস জুড়ে ‘মানবকল্যাণে আমরা ঠকতে চাই’ স্লোগানে ভিন্নধর্মী বাজার শুরু করেছে আইডিয়া সমাজকল্যান নামে স্বেচ্ছাসেবী একটি সংস্থা। সপ্তাহে দুইবার এ বাজার থেকে চাল, ডাল, আলু, তেল, চিনিসহ ৯ ধরণের পণ্য কিনতে পারবেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। এভাবে অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে পেরে সংগঠনের সদস্যরা যেমন খুশি তেমনি খুশি সুবিধাভোগীরা।

যশোর শহরের খড়কি এলাকায় আইডিয়া পিঠা পার্ক প্রাঙ্গনে  বৃহস্পতিবার থেকে বসেছে ভিন্নধর্মী এ বাজার। সরকারি এমএম কলেজের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক ও তার শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাশ্রমে গড়ে তোলা আইডিয়া সমাজ কল্যাণ সংস্থার উদ্যোগে এই বাজার বসানো হয়েছে। যশোর শহর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় জরিপ চালিয়ে ৫৩৫ জন নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারকে সনাক্ত করেছেন তারা। যারা দ্রব্যমূল্যের এই বাজারে সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। তাদের কাছেই রমজান মাস জুড়ে প্রতি সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার এ বাজার থেকে পণ্য বিক্রয় করা হবে। অস্থায়ী বাজার থেকে ৫৪ টাকা কেজি দরের চাল ২৫ টাকায়, ২৫ টাকার দরের আলু ১০ টাকায়,১৪০টাকার ডাল ৪০ টাকায়, ১২০ টাকা দরের চিনি ৪৫ টাকায়, ১৯০ টাকা লিটারের তেল ১২০ টাকায়, ৪৫ টাকার পেঁয়াজ ২০ টাকায়, ১৫০ টাকার ছোলা ৬০ টাকায়, ৬০ টাকার চিড়া ২০ টাকায় ও ৩২০ টাকার খেজুর ১০০ টাকায় কিনছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষরা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ বাজারে অর্ধেক মূল্যে পণ্য কিনতে পেরে খুশি তারা।আইডিয়া লস প্রজেক্টের সমন্বয়কারী হারুন-অর-রশিদ বলেন,প্রতি বছর রমজান মাস আসলেই কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তৈরি করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। উচ্চবিত্তরা কিনতে পারলেও নিত্যপণ্য কিনতে গিয়ে নাভিশ্বাস ওঠে নি¤œ ও মধ্যবিত্তদের। বিশেষ করে মধ্যবিত্তরা না পারে চাইতে না পারে বলতে। একটা সংকটের মধ্য দিয়ে তাদের চলতে হয়। এজন্য আমাদের প্রজেক্টের মূল্য লক্ষ্য হচ্ছে নি¤œ ও মধ্যবিত্তদের নাগালে নিত্যপণ্য পৌছে দেয়া। আমাদের সংগঠনের সদস্যরা আইডিয়া পিঠা পার্কে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে যে উপার্জন করে তার ৩৫ শতাংশ এভাবে মানববকল্যাণে ব্যয় হয়। রমজান মাস জুড়ে সপ্তাহে দুইদিন শনি ও মঙ্গলবার এ বাজার বসবে।

এদিকে শিক্ষাজীবনে এমন মহতি উদ্যোগে অংশ নিতে পেরে খুশি সংগঠনের কর্মীরা। ঐশি শিকদার নামে এক সদস্য বলেন, আমরা দুইশ’র অধিক শিক্ষার্থী এ সংগঠনের সাথে জড়িত। এ সংগঠনের পিঠা পার্ক নামক প্রতিষ্ঠানে আমরা সকলে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করি। এখান থেকে যে আয় হয় সেটাই মানবকল্যাণে ব্যয় হয়। উপকারভোগীদের মুখের হাসিটাই আমাদের কাছে চরম পাওয়া। শিক্ষাজীবনেই মানবকল্যাণে কাজ করতে পারছি। এটা আগামী দিনের জন্য পাথেয় হবে।

আইডিয়া সমাজ কল্যাণ সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক মিতালী বালা বলেন, ইহকালের লস,পরকালের লাভ। আমরা লস করছি ঠিকই, কিন্তু তাদের মুখের হাসিটা দেখেই আমরা লাভবান। গত বছর এ লস প্রজেক্ট চালু হয়। মানবকল্যাণে আগামীতেও এ প্রজেক্ট চালু রাখতে চাই।

সমাজ একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক। তিনি বলেন, মধ্যবিত্তরা দান বা ত্রান চায় না। তারা চায় ক্রয়ক্ষমতা যেন নাগালের মধ্যে থাকে। তাদের সেই ক্রয় ক্ষমতা ফেরত দিতেই এ আয়োজন। এর মাধ্যমে একটা ম্যাসেজ দিতে চাই সোসাইটিকে যে, আমরা সবাই যদি একটু একটু করে লস করতে পারি তাহলে পুরো সমাজটাই সুন্দর হয়ে যাবে।

তিনি আরো বলেন, আমরা হয়তো গোটা সমাজকে পরিবর্তন করতে পারবো না। কিন্তু যদি একটা মডেল দাঁড় করাতে পারি; বিত্তবান ও চিত্তবানরা যদি এগিয়ে আসে তাহলে আমরা সবাই মিলে ভালো থাকতে পারবো।

সংগঠনের দেয়া তথ্য মতে এই বাজারে ঈদুল ফিতরের আগে ৩০০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস কিনতে পারবেন সুবিধাভোগীরা।