গৃহবধূকে ভারতে পাচার করে পতিতাবৃত্তি, আসামীদের জবানবন্দি

ভারতে ভাল বেতনে চাকুরীর প্রলোভন দিয়ে আফসানা মিমি (২২) নামে এক বধূকে একটি পাচার চক্র ভারতে পাচার করে পতিতা বৃত্তি করানোর অভিযোগে কোতয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। সোমবার ১১ এপ্রিল সকালে মামলাটি করেন বধূর পিতা যশোর শহরের বিবি রোড,পুরাতন কসবা কদমতলার মৃত কুদরত আলীর ছেলে ইব্রাহিম ।

মামলায় আসামী করেন, ঝিনাইদহ জেলার সদর উপজেলার সুরাট পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত জলিল বিশ^াসের ছেলে মজনু বিশ^াস,মজনু বিশ^াসের স্ত্রী মোছাঃ মাজেদা খাতুন, নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার কুমড়ি পূর্বপাড়া গ্রামের চাঁন মিয়া সরদারের ছেলে সোহাগ সরদার সোহাগ সরদারের স্ত্রী মোছাঃ মিম বেগম ওরফে জয়া ওরফে রিয়াসহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪জন। পুলিশ মানবপাচার মামলায় জড়িত এজাহার নামীয় আসামী মজনু বিশ^াস ও তার স্ত্রী মোছাঃ মাজেদা খাতুনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেছে। গ্রেফতারকৃতরা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানাগেছে।

মামলায় বাদি ইব্রাহিম উল্লেখ করেন,তার মেয়ে মোছাঃ আফসানা মিমিকে অনুমান ৩ বছর পূর্বে যশোর সদর উপজেলার শেখহাটি জামরুলতলা এলাকার মৃত আব্দুস সালামের ছেলে সাইফুল ইসলামের সাথে বিয়ে দেন। বিয়ের পর বাদির মেয়ে তার স্বামী সাইফুল ইসলামের সাথে শেখহাটি জামরুলতলার জনৈক আসাদের টিনসেট বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতে থাকে। একই বাড়িতে মজনু বিশ^াস ও তার স্ত্রী মোছাঃ মাজেদা খাতুন ভাড়াটিয়া বসবাস করতো। একই বাড়িতে বসবাসের সুযোগে মজনু বিশ^াস ও তার স্ত্রী মোছাঃ মাজেদা খাতুনের বাদির মেয়ে আফসানা মিমির পরিচয় হয়।

 

স্বামী স্ত্রী বাদির মেয়ের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে তারা বাদির মেয়েকে ভারতে পাচার করে পতিতাবৃত্তি করানোর জন্য পরিকল্পনা করতে থাকে। বাদির মেয়ে তাদের এই সকল পরিকল্পনা বুঝতে না পেরে তাদের কথা মতো চলাফেরা করতে থাকে। ঘনিষ্টতার সুবাদে স্বামীস্ত্রী মিয়ে বাদির মেয়েকে ভারতে নিয়ে ভাল বেতনের কাজ করার পরামর্শ দেয়। এক পর্যায় তারা দু’জন পরস্পর যোগসাজসে তারা সংঘবদ্ধভাবে বাদির মেয়েকে ভালো বেতনের চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে প্ররোচনা দিয়ে পতিতাবৃত্তির উদ্দেশ্যে ভারতে পাচারের জন্য গত বছরের ২২ মে বিকেল ৩ টায় যশোর সদর উপজেলার শেখহাটি জামরুলতলা জনৈক আসাদের ভাড়া বাড়ি হতে বের করে আফসানা মিমিকে নিয়ে যায়। এরপর বাদির মেয়েকে মজনু বিশ^াস ও তার স্ত্রী মোছাঃ মাজেদা খাতুন অবৈধভাবে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করে গুজরাটে নিয়ে যায়।

 

গুজরাটে পূর্ব হতে অবস্থানকৃত মজনু বিশ^াসের চাচাতো শ্যালক সোহাগ সরদার এর নিকট বাদির মেয়ের অজান্তে পতিতাবৃত্তির উদ্দেশ্যে বিক্রয় করে দেয়। বাদির মেয়ে আসামীদের এই সকল চক্রান্তে বুঝতে না পেরে ভাল বেতনের কাজ পাওয়ার আসায় আসামীদের কথামতো চলতে থাকে। ধীরে ধীরে আসামীদের অসৎ উদ্দেশ্যে বাদির মেয়ে বুঝতে পেরে তাদের নিকট হতে আফসানা মিমি চলে আসার চেষ্টা করে কিন্ত আসামীরা বাদির মেয়েকে খুন করার হুমকী দিয়ে আটকে রাখে। ঐখানে সোহাগ সরদার ও তার স্ত্রী মিম বেগম ওরফে জয়া ওরফে রিয়া বিভিন্ন লোকের নিকট অর্থের বিনিময়ে বাদির মেয়েকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধেদ জোর পূর্বক অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত করায়। বাদির মেয়ে জীবনের ভয়ে আসামীদের কথামতো কাজ করতে থাকে। অতঃপর বাদির মেয়ে সোহাগ সরদার ও তার স্ত্রী মিম বেগমের অগোচরে প্রায় ৭ মাস পরে বন্দিদশা হতে পালিয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশে চলে আসে এবং বিষয়টি বাদি ও তার স্ত্রীসহ পরিবারের অন্যান্যদের জানায়। পরে সবাই আলাপ আলোচনা করে থানা এসে মামলা করেন।

মামলাটি পিবিআই তদন্তভার গ্রহন করে আসামী মজনু বিশ^াস ও তার স্ত্রী মোছাঃ মাজেদা খাতুনকে রোববার গ্রেফতার করে। সোমবার ১০ এপ্রিল তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করলে তারা পাচারের কথা স্বীকার করে আদালতে স্বেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মিজানুর রহমান-২ জানিয়েছেন।