যশোরে প্রেমিককে দিয়ে স্বামীকে খুন করালেন স্ত্রী, আটক-২

পরকীয়া প্রেমের জের ধরে সদর উপজেলার হালসা বিশ্বাসপাড়ার আব্দুর রউফের ছেলে দুবাই প্রবাসী সোহেল রানাকে (৪০) পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় কোতয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। নিহত সোহেল রানার ছোট ভাই সদর উপজেলার হালসা বিশ^াসপাড়ার আব্দুর রউফের ছেলে শাকিল খান শুক্রবার গভীর রাত ১২ টায় কোতয়ালি থানায় দাযের করা মামলায় এ কথা উল্লেখ করেন।

মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় ১/২ জনকে আসামি করা হয়। আসামিরা হলো সদর উপজেলার আলমনগর খালপাড়া গ্রামের ফজলু হোসেনের ছেলে ফারাব্বি হোসেন, নিহত সোহেল রানার স্ত্রী আলমনগর গ্রামের আব্দুল আলীমের মেয়ে মোছাঃ খুশি মিম ও ভাইপো হালসা বিশ^াস পাড়ার জাহিদুল ইসলাম রয়েলের ছেলে জিয়াদুল ইসলাম ওরফে জিসানসহ অজ্ঞাতনামা ১/২জন। পুলিশ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত এজাহার ভুক্ত আসামি মোছাঃ খুশি মিম ও জিয়াদুল ইসলাম ওরফে জিসানকে গ্রেফতার করে শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

মামলায় বাদি শাকিল খান উল্লেখ করেন, তার আপন বড় ভাই সোহেল রানা একজন দুবাই প্রবাসী। তার ভাই সোহেল রানার সাথে বিগত ৪ বছর পূর্বে আলমগন গ্রামের আব্দুল আলীমের মেয়ে মোছাঃ খুশি মিমের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর তার ভাই সোহেল রানার ঔরসে খুশি মিমের দুই বছরের একটি পূত্র সন্তান জন্ম গ্রহন করেন। বিয়ের পূর্বে মোছাঃ খুশি মিম পড়াশুনা করাকালিন একই গ্রামের ফজলু হোসেনের ছেলে ফারাব্বি হোসেনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ফারাব্বি হোসেন ও খুশি মিমের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গোপন রেখে পরবর্তীতে বাদির ভাইয়ের সাথে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর ফারাব্বি হোসেন সোহেল রানাকে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি ও হত্যার হুমকী দিয়ে আসছিল।

তখন বাদির ভাবী খুশি মিম নিজেও সোহেল রানার সাথে সংসার করতে চাইতো না। এক প্রকার বাদির ভাই ও ভাবী খুশি মিমের মধ্যে প্রায়ই সময় ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকতো। খুশি মিম তার পিতার বাড়িতে গেলে সোহেল রানার বাড়িতে আসতো চাইতো না। বাদির ভাই ২ রমজান বিদেশ থেকে বাড়িতে আসে। সোহেল রানা বাড়িতে আসার পর থেকে তার স্ত্রী খুশি মিমের সাথে মনোমানিল্য হলে খুশি মিম পিতার বাড়িতে চলে যায়। পরবর্তীতে সোহেল রানা বাদির ভাবীকে তার পিতার বাড়িতে আনতে যাওয়াকে কেন্দ্র করে উল্লেখিত আসামিসহ অজ্ঞাতনামা আসামিরা বাদির ভাইকে পূর্ব হতে হত্যার পরিকল্পনা করে আসছিল এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফারাব্বি হোসেন সোহেল রানাকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল। সোহেল রানাকে হত্যার হুমকি দেওয়াসহ সকল ঘটনার সাথে জিয়াদুল ইসলাম ওরফে জিসান অবগত ছিল। ওই তিনজন আসামির সহযোগীতায় বাদির ভাইকে হত্যার জন্য সুবিধাজনক জায়গায় নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে।

তারই ধারাবাহিকতায় গত ১২ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬ বেজে ৫০মিনিটের সময় মোছাঃ খুশি মিমকে আনতে যাওয়ার জন্য বাদির ভাই সোহেল রানা ও জিয়াদুল ইসলাম ওরফে জিসান এক সাথে মোটর সাইকেল যোগে আলমনগরের উদ্দেশ্যে রওনা হলে জিসান ফারাব্বি হোসেনকে জানায়। ওই দিন সন্ধ্যা ৭ টা বেজে ২০মিনিটে মঠবাড়ী গ্রামস্থ বুকভরা বাওড় ভেড়ির জনৈক মাস্টার আব্দুল জলিল গংদের ধানী জমির পশ্চিম পাশে সোহেল রানা ও জিয়াদুল ইসলাম ওরফে জিসানের মটর সাইকেল পৌছানো মাত্র পূর্ব হতে ওৎপেতে থাকা ফারাব্বি হোসেনসহ অজ্ঞাতনামা আসামীরা সোহেল রানা বহনকারী মোটর সাইকেলের গতিরোধ করে। ফারাব্বি হোসেনসহ তার সহযোগী অজ্ঞাতনামা আসামীরা বাদির ভাই সোহেল রানার শরীরের বিভিন্ন স্থানে একাধিক এলোপাতাড়ী ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে রাস্তায় ফেলে সোহেল রানার নিকট থাকা মোটর সাইকেল যার নং (যশোর হ-১৮-১৫০০) ফারাব্বি হোসেনসহ তার সহযোগীরা নিয়ে যায়।

সোহেল রানা প্রান বাঁচানোর জন্য ডাক চিৎকার দিলে স্থানীয় লোকজন ও পথচারীরা বাদির পরিবারের কাছে জানালে দ্রুত যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে জরুরী বিভাগে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সোহেল রানাকে মৃত বলে ঘোষনা করে। অধিক রক্তক্ষরনে সোহেল রানার মৃত হয়েছে বলে চিৎিসকরা জানিয়েছেন। হত্যাকান্ডের পর পুলিশ জিয়াদুল ইসলাম ওরফে জিসানকে হালসা বকুলতলা এলাকা হতে ও মোছাঃ খুশি মিমকে আলমনগর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। শুক্রবার ১৪ এপ্রিল তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করে।