বটিয়াঘাটা সরকারি খাদ্যগুদাম- অনিয়মই যেখানে নিয়ম!

খুলনার বটিয়াঘাটা সরকারি খাদ্যগুমে অনিয়মই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। চাতাল, রয়লার, বিদ্যুৎ সংযোগ কোনটাই নেই তারপরও মিলার সেজে সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন একাধিক ব্যক্তি। একইভাবে বোরো সংগ্রহে কেনাকাটায় অনিয়ম, ব্যবসায়ীদের সাথে সমন্বয় করে কাবিখার মাল বের না করে নতুন বস্তায় ভবে পুনরায় সংগ্রহ খামালে ঢুকায়ে নতুন চাল হিসাবে খাতায় এন্ট্রি করাসহ এমন কোন অপকর্ম নাই যা হয় না। গুদাম ইনচার্জ ও উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মিলে সরকারি অর্থ দেদারসে লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

নির্ভরযোগ্য একাধিক সুত্রে জানা গেছে, খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার খাদ্য অফিসে সরকারের সাথে চুক্তিকৃত মোট ২৬ টি মিল রয়েছে। হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া বেশিরভাগই নামস্বর্ষ। মাইল মারা রাইস মিল, সর্দার রাইচ মিল ও গাউঘরা রাইচ মিলের বয়লার, চাতাল, বিদ্যুৎ সংযোগ কোনটাই নেই। দীর্ঘদিন যাবত এগুলো পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকলেও সরকারের খাতায় তারাই মিল মালিক সেজে চাল সবরাহ করে যাচ্ছে। কিসের ভিত্তিতে এত বড় অনিময় হচ্ছে তা জানতে গেলে বেরিয়ে আসে খাদ্য কর্মকর্তাদের লুটপাটের আসল ঘটনা। আমিরপুর ইউনিয়নের বাইনতলায় আতিকের রাইচ মিল রয়েছে। যার নাম আকুঞ্জি রাইচ মিল। আতিকের টয়োটা প্রিমিয়ার ব্রান্ডের ঢাকা মেট্রো গ-২০-০৮৮৩ নম্বরের গাড়ি রয়েছে। ওই গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে ডিসিফুড থেকে শুরু করে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা ও গুদাম রক্ষক। আতিকুর তাদের বাড়ির বাজার পর্যন্ত করে দেয়। এজন্য আতিকুরই মিলারদের মধ্যে বস। বিগত মৌসুমগুলোতে অতিরিক্ত বরাদ্দের পুরোটাই আতিকুরের মিলকে দেয়া হয়েছে। এছাড়া চাল পাল্টানোসহ বিভিন্ন কারসাজির এই মিল মালিকই করে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বাইনতলা বাজারে অবস্থান মজিবর রাইস মিলের। এই রাইস মিল আতপ চাল তৈরী করে । কিন্তু অনৈতিক সুবিধা নিয়ে সেখানে সিদ্ধ ও আতপ দুটোই বরাদ্দ দিচ্ছে খাদ্য অফিস।

সুত্রমতে, বটিয়াঘাটা খাদ্য গুদামের ইনচার্জ সাবরিনা ইয়াসমিনের অনৈতিকতা যেন সব অনিয়মকে জয় করেছে। কেনাকাটা ও চাল ডেলিভারীতে সুক্ষ ও স্থুল কারচুপি করে তিনি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। চলতি বোরো সংগ্রহ মৌসুমে বটিয়াঘাটা খাদ্যগুদাম থেকে ক্রয়কৃত ধান চালে তিনি কৌশলে দুই রকমের সুবিধা আদায় করছেন। সরকার নির্ধারিত ৫০ কেজির বস্তায় ফলিত চাল ৫০ কেজি ৭০০ গ্রাম নেওয়ার কথা থাকলেও বস্তাসহ ৪৯কেজি ৫০০ গ্রাম থেকে সব্বোচ ৫০ কেজি নিচ্ছেন। বস্তা প্রতি ৭০০ গ্রাম কম নিয়ে ওই টাকা নগদে নিচ্ছেন।

। একইভাবে ৩০ কেজির বস্তায় বস্তাসহ ৩০কেজি ৩০০ গ্রাম নেওয়ার নিয়ম থাকলেও বস্তাসহ ২৯কেজি ৫০০ গ্রাম থেকে বস্তাসহ সব্বোচ ৩০ কেজি। বাকিটার টাকা নগদে হাতে গুনে নিচ্ছেন। আবার ভিজিডি, ভিজিএফসহ বিভিন্ন খাতে ডেলিভারী দেয়ার সময় ওই কম ওজনের বস্তা সরকারি নির্ধারিত ওজন বলে চালিয়ে দুই রকম সুবিধা নেয়ার ছক কষছেন।

সুত্রবলছে, টিআর ও কাবিখার চাল বের না করে ব্যবসায়ীদের সাথে সমন্বয় করে সাবরিনা ইয়াসমিন ব্যাপক জালিয়াতির আশ্রয় নেন। চলতি বোরো মৌসুমে ১ শ ২০ টন টিআর ও কাবিখার চাল পুনরায় নতুন বস্তায় ঢুকিয়ে সংগ্রহ চাল বলে খামালে রেখে দিয়েছেন। এ কাজে সহযোগিতা করেছেন মিলার আতিক, নজরুল মেম্বার ও অশোক। এ জালিয়াতি করে সাবরিনা ইয়াসমিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

গত মাসে আতিকের মিল থেকে ওসিএলএসডি সাবরিনা ৬০ টন সিদ্ধ চালের পরিবর্তে আপত চাল ভিজিডিতে দিয়েছে। আর ওই চালের পরিবর্তে গুদাম থেকে ভালো মানের চাল নিয়ে বাজারে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। নূরজাহান প্লাস্টিকের বস্তায় ওই চাল বাজারজাত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ওই মিশন থেকে অবৈধভাবে উপার্জন করা অর্থ গুদাম ইনচার্জ ও উপজেলা খাদ্য অফিসার মিলে ভাগবটোয়া করে নিয়েছেন। ওই অনৈতিক কাজে শ্রমিকরা বেশি অর্থ দাবি করলে তাদের সাথে সাবরিনার দ্বন্ধ হয়। ১৫ দিন যাবত ওই শ্রমিকদের কাজে নেয়া হয়নি। ওই সময় পাশ্ববর্তী উপজেলা চালনা থেকে শ্রমিক এনে কাজ করান গুদাম ইনচার্জ।

সুত্র বলছে , গত আমন সিজনে গুদাম ইনচার্জ সাবরিনা ইয়াসমিন ৯৪ টন ধানের ফলিত ৬০ টন চালের সাথে পুরনো চাল মিক্স করে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয়ের কথা থাকলেও ফরিয়াদের মাধ্যমে ধান কিনে গুদাম ভরে ফেলা হচ্ছে। আর কাড প্রতি ৩৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন । আর কৃষকদের গুদামে ডেকে বিলে সই করিয়ে নাম মাত্র ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এসব কাজের ক্ষেত্রে ও এগিয়ে আতিক, অশোক, নজরুলসহ আরও কিছু ব্যবসায়ী।

বটিয়াঘাটা উপজেলায় মৎস ভিজিএফ বাবদ ১৩০ মেটন চাল বরাদ্দ আসে মে মাসের শেষ সপ্তাহে। বরাদ্দকৃত চাল গুলো খাদ্য গুদাম থেকে না দিয়ে আতিকের মিল হতে অত্যন্ত নিম্নমানের লাল ও খুদ মিশ্রিত চাল ও

আতপ চাল ৭টি ইউনিয়নে পাঠানো হয়েছে। আর গুদামের বরাদ্দকৃত সমুদয় ১৩০ মেটন চাল সংগ্রহকৃত খামালে ঢুকিয়ে নেয়া হয়েছে। আর এই পুরাতন চাল সংগ্রহ বাবদ প্রতি কেজি ৪ টাকা বটিয়াঘাটা উপজেলার ওসিএলএসডি ও টিসিএফ ভাগ করে নিয়েছেন।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বটিয়াঘাটা খাদ্য গুদামের ইনচার্জ সাবরিনা ইয়াসমিন বলেন, এসব ভিত্তিহীন। তার সাথে দেখা করে রিপোর্ট করতে বলেন।

উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা বাদল বিশ্বাস অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করে বলেন, এখানে কোন

অনিয়মের সুযোগ নেই।