প্রমাণ মিলেছে প্রতারণার’ সংবাদ প্রকাশে বিভিন্ন মহলে দৌঁড়ঝাপ!

যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া ইউনিয়নের সাবেক ওলামালীগের সভাপতি নেছার উদ্দীনের ছেলে প্রতারক আসাদুজ্জামান আসাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও আইন সহায়তা প্রদানকারী সংস্থার পরিচয়পত্র করে দেওয়ার নামে চাঁদাবাজির প্রমান মিলেছে।

যশোরের তিন উপজেলার প্রায় ২০০ জন ব্যক্তির কাছ থেকে পরিচয় পত্র ও লোগো সম্বলিত টি’শার্ট দিয়ে জনপ্রতি ২ থেকে ৫ হাজার টাকা করে নিয়েছে। আর এ সংগঠনকে মানুষের কাছে আস্থাভাজন করতে গত শনিবার ঢাকঢোল বাজিয়ে জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা, বিএনপি ও জামায়াতের জেলা ও উপজেলা নেতৃবৃন্দকে অতিথি করে পরিচিতি ও শফথ গ্রহন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।তবে কোন অতিথি ঐ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি। আর এ সংবাদ onenewsbd.com নিউজসহ বিভিন্ন প্রত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ায় দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন আসাদুজ্জামান আসাদ। নিজেকে সাধু প্রমাণ করতে বিভিন্ন মহলে করছেন দেনদরবার। স্থানীয় সাংবাদিকদেরও ম্যানেজ করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।
তাকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে তার পরিচয়পত্র বাণিজ্য বন্ধ করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সুশীল সমাজ।

এমনি শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া বাজারে ড্রিমভিউ নামে কম্পিউটারের দোকান চালান কামাল হোসেন টিটু। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও আইন সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা নামে একটি সংগঠনের কর্মী হিসেবে আইডি কার্ড নিয়েছেন এ বছর। এ কার্ড ও একটি লোগো সম্বলিত টি’শার্ট নিতে হয়েছে তাকে। আর এজন্য খরচ বাবদ গুনতে হয়েছে ৪ হাজার টাকা। আর এ টাকা নিয়েছে বাগআঁচড়া এলাকার প্রতারক আলোচিত আসাদুজ্জামান আসাদ।

উপজেলার গোগা এলাকার শিক্ষক ইমানুর রহমান জানান, কিছু টাকার বিনিময়ে বাগআঁচড়ার আসাদ মানবাধিকার সংগঠনের কার্ড করিয়ে দিয়েছেন। এই কার্ড কি কাজে লাগবে জানতে চাইলে তিনি জানান, কোথাও কোনো ঝামেলায় পড়লে কার্ড বের করে দেখাতে পারবেন। আবার মাঝেমধ্যে সালিশ করে দু’পক্ষের আপস-মীমাংসা করা যাবে। এ ছাড়া পাওনা টাকা আদায় করে দেওয়া যাবে। এই সংগঠনের নামে তার পরিচিত আরও ১০-১২ জন বিভিন্ন পদবি দিয়ে কার্ড ব্যবহার করছেন বলে জানান।

এছাড়াও বাগআঁচড়া বাজারের সাতক্ষীরা লাইন বাস কাউন্টারের পরিচালক মনিরুজ্জামান মনির কাছ থেকে নিয়েছে ১৫০০ টাকা, ইছাপুর গ্রামের হেলালসহ ২৫ জনের কাছ থেকে জনপ্রতি ২০০০ টাকা করে নিয়েছে প্রতারক আসাদ।

শার্শা উপজেলার অনেক যুবক প্রতারক আসাদের মিষ্টি প্রলভবে পড়ে টাকার বিনিময়ে এ মানবাধিকার সংঠনের নামে কার্ড নিয়েছেন। আসাদের শেখানো বুলির মাধ্যমে তারা এই কার্ড দেখিয়ে মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে নানা কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছেন অর্থ। শার্শা, ঝিকরগাছা ও চৌগাছা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এভাবেই সে বিক্রি করেছে মানবাধিকার। আর চাঁদাবাজি চলছে সংগঠনের নামে। অনেক অপরাধী ও মাদক ব্যবসায়ীকে মানবাধিকার কর্মী বানিয়ে দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছে সারাদেশে ৩০৫ টি সরকার নিবন্ধিত মানবাধিকার সংগঠন আছে। যাদের অধিকাংশই মানবাধিকার রক্ষার কথা বলে প্রতারণামূলক কাজ করছে। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় রয়েছে এদের জাল। বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে শাখা-প্রশাখা। কতিপয় ভুয়া সংগঠনের লোকজন সেবাপ্রার্থীদের ভুল বুঝিয়ে মানবাধিকারের নামে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এই প্রতারক আসাদ গাং ও একই কাজে লিপ্ত।

শার্শা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তৌহিদ মিলন বলেন, বর্তমানে মানবাধিকার সংগঠনের সরকারি রেজিস্ট্রেশন পাওয়া কঠিন, তার চেয়ে বেশি কঠিন নিবন্ধন বাতিল করা। আমাদের কাছে অভিযোগ এলে তদন্ত করা হয়। বেআইনি কার্যক্রম প্রমাণিত হলে নিবন্ধন বাতিলের জন্য উপর মহলে সুপারিশ করা হবে।

প্রতারক আসাদের পরিচয়পত্র বাণিজ্যের বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও আইন সহায়তা প্রদানকারী সংস্থার চেয়ারম্যান মাহামুদুল হাসান মাহামুদ লায়নের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিচয়পত্র বাণিজ্যের বিষয়ে আমার কাছে কোন অভিযোগ নেই। তবে আমাদের সংগঠনে আসতে হলে কিছু টাকা নেয়া হয়। আমাদের কোন কর্মি যদি পরিচয়পত্র বাণিজ্য করে বেশি টাকা নিয়ে প্রতারণা করে, তার দায়ভার সংগঠন নিবেনা। যদি কারও বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ থাকে আর যদি সেটা প্রমাণিত হয়, তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হবে বলে তিনি জানান।