নকল সিগারেটে সয়লাব বাজার

Cigarettesডেস্ক রিপোর্ট: তামাকের ক্ষতিকর দিক বিবেচনায় নিয়ে এর ব্যবহার কমাতে গত কয়েক বছর ধরে সিগারেটের দাম বাড়িয়ে চলেছে সরকার। মূল্য বাড়ার ফলে একদিকে যেমন ধূমপানে অনুৎসাহী হয় অন্যদিকে বেশি দামের সিগারেট থেকে রাজস্বও বেশি আদায় হয়। কিন্তু বাড়তি দামের সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী স্থানীয়ভাবে নকল সিগারেট উৎপাদন করে বাজারে ছড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে এ খাত থেকে সরকার বছরে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া সিগারেট ও বিদেশ থেকে অবৈধপথে আসা চোরাচালান করা সিগারেট বাণিজ্য বন্ধে বিজিবি, কোস্টগার্ড, পুলিশ, সীমান্তবর্তী জেলা প্রশাসনসহ সব জেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দিতে গত ২২ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ডিও লেটার (আধা-সরকারি চিঠি) দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

চিঠিতে বলা হয়, স্থানীয় রাজস্ব আহরণের অন্যতম বৃহৎ একটি খাত হলো সিগারেট। এ খাত থেকে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ১৯ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা রাজস্ব এসেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ খাত থেকে আরও অধিক পরিমাণ রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। বর্ধিত লক্ষ্যমাত্রানুযায়ী রাজস্ব সংগ্রহ নিশ্চিত করতে হলে এ খাতে কোনোরূপ রাজস্ব ফাঁকি এবং চোরাচালান করা সিগারেট বাজারজাতকরণ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা আবশ্যক।

চিঠিতে আরও বলা হয়, গত এক বছরে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া সিগারেটের সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব সিগারেটের গায়ে নকল অথবা পুনঃব্যবহৃত ট্যাক্স বা ব্যান্ডরোল থাকে; যার কারণে সরকার ন্যায্য রাজস্ব হারাচ্ছে। মূল্য কম হওয়ায় দেশের যুবসমাজ ও সাধারণ মানুষ এসব সিগারেটে আসক্ত হয়ে পড়েছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া সিগারেট অথবা অবৈধপথে আসা বিদেশি সিগারেট বাজারে বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধির ফলে সরকার যে উদ্দেশ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করেছে, তার সফলতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

বাজার অনুসন্ধান করে তিন ধরনের অবৈধ সিগারেটের সন্ধান মিলেছে। এগুলো হলো বিদেশ থেকে আসা চোরাচালান করা সিগারেট, দেশীয় জনপ্রিয় ব্র্যান্ড নকল করা সিগারেট এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া সিগারেট। শুল্ক গোয়েন্দা ও প্রশাসনের তৎপরতার কারণে বিভিন্ন সময় চোরাচালান করা সিগারেটের খবর গণমাধ্যমে দেখা যায়। কিন্তু স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া সিগারেট বিক্রি হয় মূলত মফস্বল ও প্রত্যন্ত এলাকায়। তাই এ ধরনের সিগারেটের দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা সরকারের বিভিন্ন মনিটরিং ব্যবস্থার দৃষ্টি কম থাকে।

এনবিআর সূত্র জানায়, সরকার সিগারেট খাত থেকে গত ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। অন্যদিকে অবৈধ সিগারেট ব্যবসার ফলে একই অর্থবছরে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে দেশ।

জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী, নিম্নস্তরের সিগারেটের মূল্য (১০ শলাকার প্যাকেট) ২৭ টাকা থেকে বেড়ে ৩৫ টাকা হয়েছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মূল্যবৃদ্ধির ফলে নিম্নস্তরের সিগারেটের প্রতি শলাকার মূল্য আগের মূল্য ৩ টাকা থেকে বেড়ে ৪ টাকা হয়েছে। আর এ সুযোগ নিয়ে কিছু উৎপাদনকারী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সিগারেটের প্যাকেটে নকল বা পুনর্ব্যবহৃত ট্যাক্স স্ট্যাম্প কিংবা ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে প্রতিপ্যাকেট সিগারেট বিক্রি করছে মাত্র ১০ থেকে ১৫ টাকায়। ফলে ভোক্তা প্রতি শলাকা সিগারেট ১ থেকে দেড় টাকায় পাচ্ছে। যেখানে সরকারের নির্ধারিত প্যাকেট মূল্য অনুযায়ী প্রতি ১ শলাকা হওয়ার কথা ৪ টাকা। অথচ ৪ টাকায় ৪ শলাকা অবৈধ সিগারেট পাচ্ছে ভোক্তা।

রংপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নতুন নীতিমালার জটিলতায় গত ১ জুলাই থেকে বিড়ি ফ্যাক্টরির মালিকরা পোস্ট অফিস থেকে ব্যান্ডরোল তুলতে পারছেন না। ব্যান্ডরোল সংকটের এই সুযোগে এক শ্রেণির বিড়ি শিল্প মালিক জাল ও নকল ব্যন্ডরোল দিয়ে বিড়ি উৎপাদন করছে। ফলে প্রতিদিন সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।