ঝিনাইদহে গ্রেফতার আতংকে ঐক্যফ্রন্ট, ৩৪৭ মামলায় ৪২ হাজার আসামী

Jhenaidah map

ঝিনাইদহে ঐক্যফ্রন্টের শরীক দল বিএনপি ও ২০ দলীয় ঐক্যজোটের শত শত নেতাকর্মী এখনো বাড়ি ফিরতে পারেনি। গ্রেফতার আতংক ও একাধিক মামলার হুলিয়া নিয়ে জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতা থেকে ওায়াড পর্যায়ের নেতারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। গ্রেফতার ও হয়রানী বন্ধে সরকারের সুস্পষ্ট ঘোষনা না আসায় ভোটের হুইসেল বাজলেও বাড়ি ফিরতে পারছেন না ঐক্যফ্রন্টের শরীক দল বিএনপি ও ২০ দলীয় ঐক্যজোটের শত শত নেতাকর্মীরা। তাদের বিরুদ্ধে এখন বিভিন্ন থানায় ৩৪৭টি মামলা। এ সব মামলায় আসামী হয়েছেন ৪১ হাজার ৭৪২ জন।

এ সব নেতাকর্মীদের অনেকের ব্যবসা বানিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। কারো কারো মাঠের ধান পেকে গেলেও কাটতে পারছেন না। অজানা আতংকে দিন কাটাচ্ছে জেলা থেকে তৃনমুল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এছাড়া ভোটের দিন সম্ভব্য পোলিং এজেন্ট হতে পারে এমন সব কর্মীদেরও তালিকা করে খোঁজা হয়েছে।

ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাক এড আব্দুল মজিদ জানান, গত ১০ বছরে বিএনপি ও তার শরীকরা কোন মিছিল মিটিং ও সমাবেশ করতে না পারলেও একের পর এক নাশকতার পরিকল্পনা দেখিয়ে মামলা করা হয়েছে। নাশকতার পাশাপাশি অস্ত্র, মাদক ও বোমা নিয়ে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের চালান দেওয়া হয়েছে হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, বিএনপি মহাসচিব সরকারের কাছে যে মামলার তালিকা দিয়েছে তাতে ৩৪৭টি মামলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির দেওয়া তথ্যমতে গত দুই সপ্তাহ আগেও ঝিনাইদহ, হরিণাকুন্ডু, শৈলকুপা ও কালীগঞ্জে নুতন করে ৮ মামলায় চার’শজন আসামী করা হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট মামলার সংখ্যা ৩৪৭টি।

ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির দপ্তর থেকে কেন্দ্রে পাঠানো এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এ পর্যন্ত ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ৩৬৬। এ সব মামলায় আসামী রয়েছে ৪১ হাজার ৩৪২ জন।

সুত্রমতে এর মধ্যে ঝিনাইদহ সদর থানায় ১১২টি মামলায় আসামী হয়েছেন ১২ হাজার ৫১৫ জন, হরিণাকুন্ডুতে ৮১ মামলায় আসামী ৯ হাজার ৫’শ, শৈলকপুায় ৫১টি মামলায় আসামী ৫ হাজার ৬’শ জন, কালীগঞ্জে ৪৯টি মামলায় ৪ হাজার ৫’শ জন, কোটচাঁদপুরে ৩২টি মামলায় ৪ হাজার ১১৫ জন ও মহেশপুর উপজেলায় ৪১টি মামলায় ৫ হাজার ১১২ জনকে আসামী করা হয়েছে। সর্বোচ্চ মামলা হয়েছে ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ মসিউর রহমানের বিরুদ্ধে। তার নামে ২৫টি মামলা করা হয়েছে বলে বিএনপির দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন নিশ্চিত করেন।

ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মসিউর রহমান মুঠোফোনে জানান, গত ১০/১১ বছরে ঝিনাইদহের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে। নেতাকর্মীদের উপর যে ভাবে অত্যাচার ও নির্যাতন করা হয়েছে তা এক কথায় ছিল ভয়াবহ।

তিনি বলেন, এখনো নেতাকর্মীরা নিজ এলাকায় ফিরতে পারেনি। তারা অজানা আতংকে রয়েছেন।

এদিকে তিন দিন বিরতীর পর আবার অভিযান শুরু করেছে ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সারা জেলা থেকে ৪৮ জনকে গ্রেফতারের কথা জানিয়েছে ঝিনাইদহ ডিএসবি। ডিএসবির এক ক্ষুদে বার্তায় বলা হয়েছে জেলাব্যাপী পরিচালিত অভিযানে নিয়মিত মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ৪৮ আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ১৫ জন, হরিণাকুন্ডুতে ৩, কোটচাঁদপুরে ৫, শৈলকুপায় ১২, মহেশপুরে ৫, কালীগঞ্জে ৬ ও গোয়েন্দা পুলিশ ২ জনকে গ্রেফতার করেছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিলু মিয়া বিশ্বাস বলেন, কোন রাজনৈতিক হয়রানীর জন্য অভিযান পরিচালিত হচ্ছে না। কেবল নিয়মিত মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।

অন্যদিকে ঐক্যফ্রন্ট ও ২৩ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে অভিযানের নামে নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি যাওয়া হচ্ছে। ভোটের তারিখ ঘোষনার পর এ ধরণের অভিযান সম্পুর্ন বেআইনী। ভোটের রাজনীতি থেকে দুরে রাখার জন্য এই কৌশল বলে তারা উল্লেখ করেন।