কারাগারে খালেদা জিয়ার রাত-দিন

পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের একমাত্র বন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সময় কিভাবে কাটছে? রাত-দিন কি কাজ করে সময় পার করছেন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী? এমন প্রশ্ন হইতো আপনাদের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।

যে মামলায় খালেদা জিয়া এক বছর আগে কারাগারে গেছেন, সেই মামলায় গ্রেপ্তারের দেড় মাসের মাথায় জামিন পেলেও তার মুক্তি মেলেনি। এই মুক্তির পথে বাদ সেধেছে আরো ৩৬ মামলা। একটি মামলায় জামিন হলে, সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে অন্য মামলা। আর এভাবেই কেটে গেছে বন্দী খালেদা জিয়ার একটি বছর।

কারাগারে দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, খালেদা জিয়া ঘুম থেকে উঠে সকালের নাস্তা করেন রুটি ও সবজি দিয়ে। দেশের সার্বিক পরিস্থিত জানতে তাকে দুটি দৈনিক পত্রিকা পড়তে দেওয়া হয়। এরপর গোসল করেন, জোহরের নামাজ পড়েন। জোহরের নামাজ শেষে তিনি অজিফা পড়েন। পরে তিনি কিছুক্ষণ ডে-কেয়ার সেন্টারের বারান্দায় হাঁটাহাঁটি করেন, পরে সেখানে কিছুক্ষণ চেয়ারে বসে থাকেন।

দুপুরের খাবার খান বিকেল চারটা থেকে সাড়ে চারটার দিকে। দুপুরে তাকে ভাত, সবজি, মাছ খেতে দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের পর টিভি দেখেন। তবে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর কক্ষে কেবল বিটিভির সংযোগ রয়েছে। এরপর রাতের খাবার খান। রাতে তাকে সবজি ও রুটি, মুগ ডাল খেতে দেওয়া হয়। কোনো কোনো দিন রাতে ভাত খেতে দেয়া হয়।

কারা কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদ জিয়ার জন্য খাবার রান্না করা হয়। রান্না করা এ খাবার প্রথমে উপকারাধ্যক্ষ ও কারাধ্যক্ষ খান। পরে চিকিৎসকের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর খালেদা জিয়াকে দেয়া হয়। তিন বেলাই এসব নিয়ম মানা হয়।

কারাগার সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়া কারাগারে শান্ত ও চুপচাপ থাকেন। কারা কর্মকর্তাদের কাছে তিনি কোনো চাহিদার কথা জানান না। কিছু লাগবে কি-না কারা কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় খোঁজ নিতে গেলে খালেদা জিয়া বলেন, প্রয়োজন হলে তিনিই জানাবেন।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর পাহারায় ছয়জন মহিলা কারারক্ষী তিন শিফটে নিযুক্ত রয়েছেন। এছাড়া তার নিরাপত্তায় কারাগারের ভেতরে মোট ২৫ জন কারারক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে।

আদালতের অনুমতি নিয়ে কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে রয়েছেন তার ব্যক্তিগত পরিচারিকা ফাতেমা। তার দেখাশোনার এবং যাবতীয় কাজ ফাতেমাই করে দিচ্ছেন।

বেগম জিয়াকে কারাগারে নেয়ার পর থেকে বিএনপি তার মুক্তির জন্য মানববন্ধন, কালো পতাকা প্রদর্শন, অবস্থান কর্মসূচি, অনশন, স্মারকলিপি দেয়ার আন্দোলন করে আসছিল। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ ধরনের কোনো কর্মসূচি রাখেনি বিএনপি। নির্বাচনের পরেও এখন পর্যন্ত ‘অর্থপূর্ণ’ কোনো কর্মসূচি দেয়া হয়নি।

তবে শুক্রবার দলটি প্রতিবাদ সভা করবে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে। কাল সারা দেশে প্রতিবাদ সমাবেশের কর্মসূচি রয়েছে।

বিএনপির নেতারা বলেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি এখন তাদের প্রধান এজেন্ডা। তবে কর্মসূচি দেয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সংযত হয়ে চলতে হচ্ছে। নেতাকর্মীরা মামলা-হামলায় জর্জরিত থাকায় তাদেরকে হুট করে এখন আরো ঝামেলায় ফেলা যাবে না। এ কারণে সময় নিয়ে ধারাবাহিক কর্মসূচির কথা ভাবা হচ্ছে।