গুরুতর অসুস্থ হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ‘তার (খালেদা) ওপর এখন রীতিমত চিকিৎসা সন্ত্রাস চলছে।’
মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন রিজভী।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গণমানুষের প্রাণপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিনা অপরাধে ৬৮৫ দিন ধরে বন্দি করে রাখা হয়েছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও সুচিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তার সুচিকিৎসা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানালেও তাতে কর্ণপাত করছেন না প্রধানমন্ত্রী। বেগম খালেদা জিয়ার ন্যায্য জামিনে বাধা দেয়া হচ্ছে। এখন তার ওপর চলছে রীতিমত চিকিৎসা সন্ত্রাস।’
রিজভী বলেন, ‘খালেদা জিয়া কেমন আছেন? তাকে নিয়ে কি করা হচ্ছে কিছুই জানতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা আশঙ্কায় আছি দেশনেত্রীকে নিয়ে। তার অসুস্থতা পূর্বের চেয়ে ভিন্ন ও গভীর। আমরা চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় আছি। আসলে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও নিয়মিত ওষুধ সেবনে কোনো কারসাজি করা হচ্ছে কি না? সরকারপ্রধানের সরাসরি হস্তক্ষেপে পিজি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মনগড়া স্বাস্থ্য প্রতিবেদনে জামিন বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপর থেকে আমরা আশঙ্কা করছি দেশনেত্রীকে প্রাণনাশ করার ভয়ংকর কোনো নীলনকশা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে কি না?’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকাসহ ভারতীয় পত্র-পত্রিকায় বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে দিল্লির সম্পর্ক শীতল এবং টানাপোড়েন চলছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। বিশ্বস্ত প্রতিবেশী দেশের সরকারের সাথে সম্ভবত কোনো কারণে অম্লমধুর বিরহ পর্ব চলছে শেখ হাসিনার সরকারের। এতে প্রতিবেশীর আস্থাভাজন হতে না পেড়ে রাতের অন্ধকারে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় থাকা এই অবৈধ সরকারের মাথা বিগড়ে গেছে। ফলে মুরব্বিদের তুষ্ট করে শীতল সম্পর্ক উষ্ণ করতে আবোল-তাবল প্রলাপ বকা শুরু করেছেন এই সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা।’
রিজভী বলেন, “নাগরিকত্ব আইন এবং নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) জটিলতায় সংখ্যালঘু ভারতীয় মুসলমানদের রাষ্ট্রহীন ঘোষণার জেরে গোটা ভারত যখন বিক্ষোভে উত্তাল তখন আওয়ামী লীগ সরকার তাদের ন্যক্কারজনকভাবে সমর্থন দিচ্ছে। সম্প্রতি ভারতীয় জনতা পার্টির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পার্লামেন্টে তার বক্তব্যে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানরা বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের সময় এখনো নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করার পর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব তাদের প্রতিবেশী মুরব্বিদের সামাল দিতে দায় এড়ানোর জন্য দোষ চাপাচ্ছেন বিএনপির ওপর।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘গতকাল তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন ২০০১ সাল থেকে যে সংখ্যালঘু নির্যাতন এদেশে হয়েছে, এটা কেবলমাত্র একাত্তরের বর্বরতার সাথে তুলনা হয়। বিএনপি যতই সত্যকে চাপা দিতে চেষ্টা করুক না কেন, তখন কীভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার হয়েছে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর। ওই অবস্থায় দেশ থেকে পালানোই ছিল স্বাভাবিক।’
‘ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্য মীরজাফরের সঙ্গে তুলনীয়। মীরজাফররাই ভেতর থেকে বিশ্বাসঘাতকতা করে বিদেশি শক্তিকে দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে সহযোগিতা করেছিল।’
রিজভী বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেবরাও নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে বিদেশি মুরব্বিদের প্রতিভু হয়ে তাদের কুর্নিশ করছে। এ কারণে মুরব্বিদের প্রীতিধন্য হওয়ার জন্য নিজ দেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলের বিরুদ্ধে মিথ্যা কলঙ্ক রটনা করতে প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
বিএনপির সময় কোনো সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়নি বলেও দাবি করেন রিজভী।