‘মিলিয়ন ম্যান মার্চ’ : যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী মিছিলে লাখ লাখ ইরাকি

মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের দাবিতে বাগদাদের রাস্তায় নেমে এসেছেন লাখ লাখ ইরাকি। ‘আমেরিকা ধ্বংস হোক, ইসরাইল ধ্বংস হোক। ইরাক থেকে এখনই বের হও মার্কিন সেনারা। নো টু আমেরিকা বা মার্কিনিদের প্রতি না’ স্লোগানে কাঁপছে দেশটির রাজপথ। মার্কিন সেনাদের হটানোর দাবিতে ‘মিলিয়ন ম্যান মার্চ’ নামক এ পদযাত্রায় যোগ দিতে শুক্রবার সকাল থেকেই ইরাকিদের ঢল নামে।

আরব গণমাধ্যমগুলো জানায়, কয়েক দশকের মধ্যে এত বড় মার্কিন বিরোধী বিক্ষোভ ইরাকে আর দেখা যায়নি। কয়েক মিলিয়ন ইরাকি এতে যোগ দিয়েছেন। বাগদাদের অধিবাসীরা ছাড়াও ইরাকের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে শিয়া, সুন্নি, কুর্দি ও আরব গোত্রগুলো এই মহাবিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগের হাতেই রয়েছে আল্লাহু আকবর বা আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ বাক্য খচিত ইরাকের জাতীয় পতাকা এবং বড় বড় ব্যানারে লেখা রয়েছে মার্কিন বিরোধী স্লোগান। মিছিল নিয়ে বাগদাদের তাহরির স্কোয়ার ও মার্কিন দূতাবাসের সামনেও সমবেত হয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।

লেবানন ভিত্তিক আরব গণমাধ্যম আল মাসদার তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ইরাকের এই শান্তিপূর্ণ মহাবিক্ষোভকে ১৯২০ সালে অনুষ্ঠিত ইরাকের ইসলামী বিপ্লব বা গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। সে সময় ইরাক ও ইরানের প্রখ্যাত শিয়া ও সুন্নি আলেমদের আহ্বানে ব্রিটিশ দখলদারির বিরুদ্ধে ইরাকের সর্বত্র গণ-প্রতিরোধ শুরু হয়।

ইরাকে আজকের গণ-বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন দেশটির প্রধান প্রধান গোত্র-প্রধান এবং তাতে সমর্থন দিয়েছেন ইরাকের শিয়া ও সুন্নি ধর্মীয় নেতৃবৃন্দসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো।

বিক্ষোভ মিছিলে ইরাকের শিয়া সম্প্রদায়ের প্রভাবশালী নেতা মুক্তাদা আল সাদর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘যদি ইরাক ত্যাগে মার্কিন সেনারা সম্মত না হয়, তাহলে অন্য রাষ্ট্রের ওপর অবৈধ দখলদারিত্ব এবং শত্রু হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বিবেচিত হবে।’

চলতি বছরের শুরুতে ইরানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি ও অভিজাত কুদস ফোর্সের প্রধান মেজর জেনারেল কাসেম সোলেইমানিসহ কয়েক ইরাকি কমান্ডারকে ড্রোন হামলায় হত্যা করে মার্কিন বাহিনী।

পরে ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধের শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। নিজেদের মাটিতে নতুন কোনো যুদ্ধক্ষেত্রে চাই না বলে ইরাকিরা ব্যাপক বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এরই মধ্যে গত ৫ জানুয়ারি ইরাকের পার্লামেন্টে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার সম্পর্কিত একটি বিল পাস হয়।

বিলটিতে সমর্থন দিয়েছিল ১৭০ জন সদস্য। যেখানে যে কোনো বিল পাসের জন্য ১৫০ জন সংসদ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন।

কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেনা প্রত্যাহারের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেন। তিনি দাবি করেন, ইরাকের নিরাপত্তায় বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। যতদিন ইরাকের সরকার ঘাঁটি নির্মাণের ক্ষতিপূরণ না দিবে, ততদিন সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হবে না।