কুমারীত্ব ফিরে পাওয়ার চেষ্টা বেআইনি!

নারীর কুমারীত্ব নিয়ে আজন্মকাল ধরে সমাজে বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণা চলে আসছে। এই ভ্রান্ত ধারণাই আঁকড়ে আছে অনেক দেশ।

এখন থেকে কুমারীত্ব ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করলে অপরাধ বলে গণ্য করা হবে ব্রিটেনে। এ সংক্রান্ত যে কোনো ধরনের চিকিৎসাকে বেআইনি বলে ঘোষণা করেছে দেশটি।

দেশটির সরকার জানিয়েছে—  কুমারীত্ব ফিরে পাওয়ার চিকিৎসাকে যদি মান্যতা দেওয়া হয়, তবে পরোক্ষে কুমারীত্ব রক্ষা করার দাবিকেও মেনে নেওয়া হচ্ছে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রিটেনের পরিচর্যা ও মানসিক স্বাস্থ্য মন্ত্রী গিলিয়ান কিগান বলেছেন, এই দেশে দুর্বল নারী ও মেয়েদের সুরক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ক্যাথলিক প্রভাবাধীন ব্রিটেনে এক শ্রেণির মানুষ এখনও বিয়ে হওয়া পর্যন্ত মেয়েদের কুমারীত্ব বজায় রাখার ধারণায় বিশ্বাসী। যদিও আধুনিকপন্থিদের দাবি কুমারীত্ব রক্ষা করার ধারণাটিই অবমাননাকর।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নারীবাদীদের দাবি— ‘কুমারীত্ব’ ধারণাটি তৈরিই করা হয়েছে মেয়েদের দমিয়ে রাখার একটি সামাজিক অস্ত্র হিসেবে। এমন ধারণার সঙ্গে মানিয়ে নিতে অনেক মহিলাকেই মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণার শিকার হতে হয়।

কুমারীত্বসংক্রান্ত যে সংস্কারটি সমাজে চালু আছে, তা হলো— একজন নারীকে বিবাহিত হওয়ার আগে পর্যন্ত তার দেহের কুমারীত্ব রক্ষা করতে হবে।

বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে প্রথম মিলনে স্ত্রীর যৌনাঙ্গ থেকে রক্তপাত হওয়াকেই এ ক্ষেত্রে কুমারীত্বের প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

ইরাক-ইরানের মতো পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোতে এই ধারণার প্রচলন সবচেয়ে বেশি। ইরানে বিষয়টিকে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, সে দেশের শিয়া ধর্মের এক ধর্মগুরু ফতোয়া জারি করে মেয়েদের কুমারীত্ব ফিরে পাওয়ার চিকিৎসাকে বৈধ ঘোষণা করেছেন।

এ ছাড়া আমেরিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, পশ্চিম ইউরোপ এবং পশ্চিম এশিয়ার অন্য দেশগুলোতেও এই চিকিৎসা এখনও চালু রয়েছে। এমনকি ভারতেও এ সংক্রান্ত চিকিৎসা করা হয়।

স্ত্রীরোগের মূল ধারার চিকিৎসার অধীন নয়। বরং একে প্লাস্টিক সার্জারি বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। খরচও অনেক বেশি। তবে এই চিকিৎসার চাহিদা রয়েছে।

ব্রিটেনে ক্লিনিকে এই চিকিৎসার জন্য ৩ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত খরচ হয়, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩ লাখ ৪৬ হাজার টাকার সমান।

নতুন আইনে বলা হয়েছে, যেসব ক্লিনিকে এ ধরনের চিকিৎসা করা হবে বা যে চিকিৎসক এ চিকিৎসা করবেন, তাদেরও সমান দোষী বলে গণ্য করা হবে। ধরে নেওয়া হবে তারা এ কাজে মদত দিচ্ছেন। আর অপরাধ প্রমাণ হলে জেল হবে পাঁচ বছর পর্যন্ত।

ব্রিটেনের কোনো নাগরিক যদি এই চিকিৎসা করাতে দেশের বাইরেও যায়, সেটিও অপরাধ বলে গণ্য করা হবে।

ব্রিটেনের এ সিদ্ধান্ত সাধারণ জনতা প্রশংসা করেছেন। তবে একই সঙ্গে মৌলিক অধিকার রক্ষা নিয়ে আন্দোলনকারীরা প্রশ্ন তুলেছেন এ সিদ্ধান্ত নিয়ে।

তারা জানতে চেয়েছেন, চিকিৎসার ক্ষেত্রে কারও ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে কি? কেউ নিজে শরীরে কোনো অঙ্গ প্রতিস্থাপন করবেন কি করবেন না, তা কি সরকার ঠিক করে দেবে?