কোটচাঁদপুর টিআইসি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অবসরে

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার তালিনা ইকড়া ও চাঁন্দেরপোল(টিআইসি) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শনিবার ১৮ মার্চ এক অনাড়াম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কর্মজীবন থেকে অবসর নিলেন বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক( বাংলা) মোঃ খলিলুর রহমান ও কর্মবীর( চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী) মোঃ বাবর আলী।
১৯৯৫ সালে এলাকার কিছু শিক্ষানুরাগী ব্যক্তির উদ্যোগে ঝিনাইদহ সদর ও কোটচাঁদপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী তালিনা গ্রামে মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। পার্শ্ববর্তী জালালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ছবেদ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং গুড়পাড়ায় দাখিল মাদ্রাসার কারণে বিদ্যালয়টির প্রাতিষ্ঠানিক রুপ তৈরি ও প্রতিষ্ঠা ছিল চ্যালেঞ্জ।

বিদ্যালয়ে নিয়োগকৃত শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটি ও কিছু মানুষের সহযোগীতায় বিদ্যালয়টি আজ এলাকায় শিক্ষার আলো চড়াচ্ছে। প্রতিষ্ঠার প্রায় ৩০ বছর হতে চললো। গতকাল শনিবার বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অলিয়ার রহমানের সভাপতিত্বে বিদায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন জিবি কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তফা শাহিদ, কুশনা ইউনিয়ন পরিষদের প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আলা উদ্দিন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান, হাকিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও টিআইসি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহকারী শিক্ষক(গনিত) আশরাফুল ইসলাম, বিদ্যালয়ের ধর্ম শিক্ষক সাইদুর রহমান, সুশীল কুমার, মহিদুল ইসলামসহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ, ম্যানেজিং কমিটির সদস্যবৃন্দ, প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীবৃন্দ। খলিলুর রহমান ১৯৯৭ সালে এই বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক( বাংলা) হিসাবে যোগদান করেন এবং বাবর আলী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই যোগদান করেন।

বিদ্যালয় থেকে প্রায় ৩০ বছরে বহু শিক্ষার্থী মাধ্যমিক পাশ করে বেরিয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভ করে দেশের বহু সুনামধন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে। কেউ কেউ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছেন। বিদায় অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যাচের কয়েকশ প্রাক্তন শিক্ষার্থী উপস্থিত হন। অনেকেই স্মৃতী চারণমূলক বক্তব্য রাখেন। খলিলুর রহমান বিদ্যালয়ে সকল শ্রেণির বাংলা ও নবম-দশম শ্রেণির পৌরনীতি ক্লাস নিতেন।

তিনি ছাত্রছাতীদের আপন করে নিতেন তার আপন গুনে। যার কারণে বিদ্যালয় ছাড়ার ২৫ বছর পরেও তাকে মনে রেখেছে শিক্ষার্থীরা। মানুষ স্বভাবজাত ভাবে হিরোইজ্যমকে অনুসরণ করে। তার চোখে হিরো হয়ে ধরা দেওয়া যে কোন ব্যক্তি ও আদর্শকে অনুসরণ করে। এই বিদ্যালয়ে খলিলুর রহমান ছিলেন শিক্ষার্থীদের চোখে হিরো। যেকারণে পাঠ দানে তিনি শিক্ষার্থীদের আলাদা মনোযোগ পেতেন। বাংলা ক্লাস নেওয়ার সুবাদে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ও পৌরনীতি ক্লাস নেওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের মনন তৈরিতে তার আদর্শের ছাপ রেখে দিয়েছেন। অন্যদিকে বাবর আলীর হাতের পানি পান করেনি এমন ৩০ বছরের কোন শিক্ষার্থী নেই। তিনি অলসতা বা কর্মানীহা দেখাননি কখনো।

গায়ে ১০৩ ডিগ্রি জ্বরের কারণে তাকে স্কুল ছুটি দিলেও তিনি স্কুলে এসে ডিউটি করেছেন। প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের স্মৃতি চারণে এমই বক্তব্য উঠেছে বিদায়ী মানুষের কর্মজীবন নিয়ে। তারা অনুষ্ঠানে সস্ত্রীক উপস্থিত ছিলেন। প্রাক্তন শিক্ষার্থী আজমুল হোসেন বলেন, খলিলুর রহমান ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রাণভ্রোমরা। তাকে ছাত্রছাত্রীরা ভয় পেত না ভালো বাসত। তার ভালোবাসা না পাওয়ার ভয় পেতো। সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামে তার লেখা নাটক থাকতো সমাজের অসংগতি ও কুসংস্কার নিয়ে সবার আকর্ষণের কেন্দ্র। সবাই একসময় অপেক্ষায় থাকতো আগামী অনুষ্ঠানে কি নাটক নিয়ে আসছেন খলিলুর রহমান। বিদায় অনুষ্ঠান শেষে তাদেরকে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে বাড়িতে পৌছে দেয় শিক্ষার্থীরা। বক্তব্যকালে স্মৃতিচারণ করে তারাও চোখের অশ্রু ঝরান। দোয়া কামনা করেন বাকি জীবনের জন্য।