র‌্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যু: পোস্টমর্টেম রিপোর্ট চেয়েছেন হাইকোর্ট

নওগাঁ শহর থেকে আটক করার পর র‌্যাব হেফাজতে মারা যাওয়া সুলতানা জেসমিনের (৪৫) পোস্টমর্টেম রিপোর্ট চেয়েছেন হাইকোর্ট।

এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আনার পর সোমবার (২৭ মার্চ) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে প্রতিবেদন নজরে আনেন আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদ।

আদালত রাষ্ট্রপক্ষের কাছে জানতে চান এ ঘটনায় মামলা হয়েছে কিনা? তখন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, আরএমপি কমিশনারের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন এখন পর্যন্ত কোনো মামলা করা হয়নি। তারা (ভুক্তভোগীর পরিবার) কোনো মামলা করেনি।

আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে বলেন, আমরা ভুক্তভোগী নারীর পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেখব, সেটা আগামীকাল নিয়ে আসবেন। আর ওই নারীকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে কোন কোন কর্মকর্তা ছিলেন তাদের সবার নাম-পরিচয় আমাদের সামনে নিয়ে আসবেন।

এরপর আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) দিন ধার্য করেন।

গত বুধবার (২২ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় থেকে তাকে আটক করা হয়। এরপর শুক্রবার (২৪ মার্চ) সকাল ৯টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই নারীর মৃত্যু হয়।

সুলতানা জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) ভাষ্য, সুলতানা জেসমিনের নামে প্রতারণার অভিযোগ ছিল। সে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করা হয়েছিল।

সুলতানা জেসমিনের মামা ও নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক (মন্টু) বলেন, আমার ভাগনি বুধবার (২২ মার্চ) সকালে অফিস করার জন্য বাসা থেকে বের হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুক্তির মোড় থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে এসে র‌্যাবের পোশাক পরা লোকজন তাকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর তাকে কোন র‌্যাব ক্যাম্পে নেওয়া হলো, সে ব্যাপারে আমরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করতে থাকি। দুপুর ১২টার পর জানতে পারি, সুলতানা নওগাঁ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেখানে গিয়ে দেখি র‌্যাবের লোকজন সেখানে। ভাগনি কোনো কথাবার্তা বলতে পারছিল না। এরপর কিছুক্ষণ পর তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার (২৪ মার্চ) সকাল ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়। শুক্রবার সকালে মৃত্যু হলেও মরদেহ দেওয়া হয় শনিবার (২৫মার্চ) দুপুরের পর।

তিনি বলেন, সুলতানার সঙ্গে তার স্বামীর ছাড়াছাড়ি হয় ১৭ বছর আগে। এরপর সে তার এক সন্তানকে অনেক কষ্ট করে অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে লালন-পালন করে আসছিল। নওগাঁ শহরের জনকল্যাণ এলাকায় একটা ভাড়া বাড়িতে থেকে ছেলেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছিল। সে ভূমি অফিসের একজন সামান্য কর্মচারী। কোনো দিন তার বিরদ্ধে কোনো দুর্নীতি কিংবা অনিয়মের অভিযোগ কেউ করতে পারেনি।

রাজশাহী র‌্যাব-৫ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর নাজমুস সাকিব বলেন, সুলতানা জেসমিনের নামে আর্থিক প্রতারণার একটি অভিযোগ পাই। তার ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক টাকা লেনদেনের অভিযোগ ছিল। পরে তার ব্যাংক স্টেটমেন্ট সংগ্রহ করে আমরা অভিযোগের সত্যতা পাই। অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় থেকে র‌্যাব হেফাজতে নেওয়া হয়।