আগামী অর্থবছর থেকেই সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর আশা

আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে দেশে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনকালে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এদিন সংসদে তিনি আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এ কার্যক্রম ইতোমধ্যে অনেক দূর এগিয়েছে। জাতীয় সংসদে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩’ পাস হয়েছে। শিগগির একটি পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে এবং প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের মাধ্যেম এ কর্তৃপক্ষকে কার্যকর করা হবে। আশ করা হচ্ছে আগামী ২০২৩–২৪ অর্থবছর থেকেই সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, প্রস্তাবিত স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হলে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়স থেকে ৫০ বছর বয়সী একজন সুবিধাভোগী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বছরের অধিক বয়স্ক একজন সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর চাঁদা প্রদান সাপেক্ষে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। এ কার্যক্রমে প্রবাসীরাও অংশ নিতে পারবেন। পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগে মৃত্যু হলে পেনশনারের নমিনি পেনশনারের ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার অবশিষ্ট সময় পর্যন্ত পেনশন পাবেন।

এদিকে চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বছরের চাঁদা প্রদান করার আগেই মারা গেলে জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে। চাঁদাদাতার আবেদনের প্রেক্ষিতে জমাকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ হিসেবে দেওয়া হবে। পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে। এর বিপরীতে কর রেয়াত সুবিধা পাওয়া যাবে। এছাড়া মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়করমুক্ত থাকবে।

এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী জুলাইয়ে আগ্রহী পেনশনারদের নিয়ে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। এজন্য ছয় ধরনের প্রোডাক্ট স্কিম নিয়ে সর্বজনীন পেনশন আইনের বিধিমালার খসড়া প্রণয়ন করেছে অর্থ বিভাগ। দেশের ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী প্রায় ১০ কোটি নাগরিককে ৬টি শ্রেণি অনুযায়ী ভাগ করে এই স্কিম নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হলো– বেসরকারি প্রাতিষ্ঠানিক চাকরিজীবী পেনশনার, প্রবাসী/অনিবাসী পেনশনার, শ্রমিক শ্রেণি, অপ্রাতিষ্ঠানিক জনগোষ্ঠী, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিভুক্ত জনগোষ্ঠী এবং শিক্ষার্থী। প্রতিটি স্কিম হবে স্বতন্ত্র। সব স্কিমে একটি ন্যূনতম চাঁদার হার নির্ধারিত থাকবে।

শুরুতে মডেল জেলা হিসেবে রাখা হতে পারে ঢাকা এবং দেশের অন্য যে কোনো একটি জেলাকে। পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের মেয়াদ এক থেকে দুই বছর হতে পারে। এর সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে পরে তা সারাদেশে বিস্তৃত করা হবে। তবে শুরুর প্রক্রিয়াটি হবে সীমিত পরিসরে। ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা’ সারাদেশে চালু হওয়ার পর অন্তত পাঁচ বছর তা ঐচ্ছিক রাখা হবে। পরে ২০৩০ সালের মধ্যে এটি সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা হতে পারে।