You promised the world and I fell for it
I put you first and you adored it
Set fires to my forest
And you let it burn
Sang off key in my chorus
সেলেনা গোমেজের লেখা বিখ্যাত গান বাংলা করলে দাঁড়ায়—তুমি আমাকে ভালোবাসতে হারিয়ে যাও। Lose You to Love Me – এই লাইনগুলো দিয়েই শুরু করছি আজকের লেখা।
আজকের ক্ষুদ্র আয়োজন গায়িকা, গীতিকার, নায়িকা, প্রযোজক, উদ্যোক্তা ও ইনফ্লুয়েন্সার সেলেনা গোমেজের কথা। মাত্র ৩২ বছর বয়সে তিনি নাম লিখিয়েছেন ‘সেলফ-মেড’ তরুণ বিলিয়নিয়ারদের তালিকায়। তাঁর পরিচয় দেবার প্রয়োজন নেই।
এই ২০২৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর, ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা বারবারা কাউন্টির শান্ত শহর মন্টেসিটোতে, এক আবেগঘন মুহূর্তের সাক্ষী হলো বিশ্ব। বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন—হলিউড সুপারস্টার সেলেনা গোমেজ ও জনপ্রিয় গায়ক-প্রযোজক বেনি ব্লাঙ্কো।
এটি কেবল একটি বিয়ে নয়, বরং এক দীর্ঘ সংগ্রাম, ভাঙা হৃদয়ের ব্যথা, বন্ধুত্ব, তারকাখ্যাতি এবং অবশেষে সত্যিকারের ভালোবাসার পূর্ণতার প্রতিচ্ছবি।
এ যেন রূপকথার মতো আয়োজন। বিয়ের ভেন্যুটি যেন জাদুময়। সাদা লাক্সারি মার্কি টেন্ট ঝুলছে আকাশে, চারপাশে তালগাছ দোল খাচ্ছে, ঝলমলে আলোয় সাজানো চারদিক। ভেতরে আউটডোর লাউঞ্জ, ককটেল কর্নার আর ১৭০ জন অতিথির জন্য গৌরমেট খাবারের আয়োজন—সব মিলিয়ে এক স্বপ্নের পরিবেশ।
অতিথিরা ছিলেন সান্তা বারবারার অভিজাত এল এনকান্টো হোটেলে, যেখানে এক রাতের জন্য একটি রুম ভাড়া ছিল প্রায় সাড়ে তিন হাজার ডলারেরও বেশি। বলাবাহুল্য এই জাঁকজমকপূর্ণ কিন্তু ঘরোয়া আবহের আয়োজনের পেছনে ছিলেন হলিউডের বিখ্যাত ইভেন্ট প্ল্যানার মিন্দি ওয়েইস।
কনে ও বর রূপকথার চরিত্রে পরিণত হলেন। সেলেনা হাজির হয়েছিলেন কাস্টম রালফ লরেন গাউনে—হাল্টার-স্টাইল, ফুলেল নকশা আর লম্বা ঝলমলে ভেইলসহ। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন জীবন্ত রূপকথার রাজকন্যা। অন্যদিকে বেনি ব্লাঙ্কো ছিলেন কালো ক্লাসিক টাক্সিডোতে, সাথে বিশেষ নকশার কফলিংকস।
সবচেয়ে আবেগঘন মুহূর্ত আসে যখন তারা পড়েন নিজ হাতে লেখা প্রতিশ্রুতি (vows)। সেখানে ছিল ভালোবাসা, হাস্যরস আর জীবনের প্রতিশ্রুতি—যা অনেকের চোখে জল এনে দেয়।
তারকাখচিত অতিথি তালিকা এ বিয়েকে পরিণত করে তারকা খচিত এক মিলনমেলায়। সেলেনার ঘনিষ্ঠ বন্ধু টেলর সুইফট, আলোচিত মুখ প্যারিস হিলটন, Only Murders in the Building সহ-অভিনেতা মার্টিন শর্ট ও অ্যাশলি পার্ক। শৈশবের Disney সহকর্মী থেকে শুরু করে দীর্ঘদিনের বন্ধু—সবাই উপস্থিত ছিলেন এই বিশেষ দিনে।
একদিন আগে, অর্থাৎ ২৬ সেপ্টেম্বর, তারা আয়োজন করেছিলেন এক উষ্ণ রিহার্সাল ডিনার।
সেলেনার সংগ্রাম ইতিহাস হয়ে থাকবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। অসুস্থতা থেকে নতুন জীবনে প্রবেশ সহজ ছিলো না তার জন্য। এই বিয়েকে বিশেষ করেছে সেলেনার জীবনের দীর্ঘ সংগ্রাম। ২০১৫ সালে তিনি জানান যে তিনি লুপাস নামের অটোইমিউন রোগে আক্রান্ত। ধীরে ধীরে তার কিডনি বিকল হয়ে যায় এবং ২০১৭ সালে প্রয়োজন হয় কিডনি প্রতিস্থাপনের।
তখনই এগিয়ে আসেন তার প্রিয় বন্ধু ফ্রানসিয়া রেইসা, যিনি নিজের কিডনি দান করে বাঁচিয়ে দেন সেলেনার জীবন। সেলেনা নিজেই বলেছিলেন—“আমি হয়তো বেঁচে থাকতাম না। ফ্রানসিয়ার কাছে আমি চিরদিনের ঋণী। ”
কিন্তু সংগ্রাম এখানেই শেষ হয়নি। মানসিক অবসাদ, বিষণ্ণতা আর ভাঙা সম্পর্ক তাকে বহুবার কাবু করতে চেয়েছে। বিশেষ করে জাস্টিন বিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙন তাকে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছিল।
তবুও সেলেনা বারবার উঠে দাঁড়িয়েছেন—সংগীত ও অভিনয়ের শক্তি নিয়ে, Rare অ্যালবাম থেকে শুরু করে Only Murders in the Building সিরিজ পর্যন্ত।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সেলেনা ও বেনি প্রথমবারের মতো তাদের প্রেম প্রকাশ্যে আনেন। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বেনি তাকে প্রপোজ করেন।
২০২৫ সালের মার্চে তারা প্রকাশ করেন যৌথ অ্যালবাম I Said I Love You First—যেখানে ধরা পড়ে তাদের প্রেম ও যাত্রার সুর।
আর অবশেষে, সেপ্টেম্বরে তারা পূর্ণতা দিলেন সেই প্রেমকে।
বেনি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “সে শুধু আমার প্রিয় নয়, আমার সঙ্গী—সঙ্গীতে, জীবনে, আর এখন চিরদিনের জন্য। ”
বিয়ের এইদিনকে সামনে রেখে সেলেনা গোমেজ বললেন, “আজকের দিন শুধু ভালোবাসার নয়—এটি টিকে থাকা, বিশ্বাস আর নতুন শুরুর প্রতীক। ”
বেনি ব্লাঙ্কো বললেন, “আমি তার চোখে তাকাই আর আমার পুরো পৃথিবী দেখি। আজ সেই পৃথিবী হয়ে গেল চিরদিনের। ”
ওদের এই বিয়েটি এটি কেবল একটি সেলিব্রিটি বিয়ে নয়। যারা সেলেনাকে বছরের পর বছর অনুসরণ করেছেন, তাদের জন্য এই বিয়ে কেবল একটি তারকা-আয়োজন নয়। এটি প্রমাণ—কষ্টকে জয় করা যায়, বন্ধুত্ব জীবন বাঁচাতে পারে, ভাঙা হৃদয়ের পরেও ভালোবাসা আসতে পারে। মন্টেসিটোর সেই আয়োজন আসলে আশার জয়ের গল্প। রূপকথা রাতারাতি লেখা হয় না—এগুলো গড়ে ওঠে দীর্ঘ অশ্রু, ক্ষত, সুস্থতা আর অবশেষে আনন্দ দিয়ে।
লেখাটিকে শেষ করতে হচ্ছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে, সেলেনা গোমেজের এই বিয়ে শুধু তার জীবনের একটি নতুন অধ্যায় নয় এটি তার বিজয়ের গল্প। Disney-শিশু তারকা থেকে বিশ্বখ্যাত আইকন, হাসপাতালের বিছানা থেকে আলো ঝলমলে স্টেজ, ভাঙা সম্পর্ক থেকে নতুন প্রেম—সব কিছুর পর তিনি পেলেন নতুন সূচনা।