‘খালেদা জিয়ার পেপারবুকে অনেক তথ্যই নেই’

high supreme courtঢাকা: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার খালাস চেয়ে করা আপিল আবেদনের শুনানির জন্য প্রস্তুত হওয়া পেপারবুকে অনেক তথ্যই নেই বলে আদালতকে অবহিত করেছেন তার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। এ সংক্রান্ত এক আবেদনের শুনানি করে বৃহস্পতিবার (১২ জুলাই) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চকে বিষয়টি অবহিত করেন খালেদা জিয়ার ওই আইনজীবী।

এর আগে আপিল শুনানির নির্ধারিত দিন অনুসারে আদালতে উপস্থিত হন উভয়পক্ষের আইনজীবীরা। খালেদা জিয়ার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সিনিয়র অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী,অ্যাডভোকেট আব্দুর রেজাক খান, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন প্রমুখ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান।

শুনানির আগে অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী আদালতে একটি আবেদন দাখিল করেন। ওই আবেদনের বিষয়ে তিনি আদালতকে বলেন, ‘পেপারবুকে (জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায়) অনেক তথ্যই নেই। গুরুত্বপূর্ণ কিছু নথি ও কাগজ পেপারবুকে সরবরাহ করা হয়নি বলে আমরা মনে করছি। তাই ওইসব নথি ও কাগজ যুক্ত করে একটি সম্পূরক পেপারবুক সরবরাহের আবেদন করছি। আগে এ আবেদনের নিষ্পত্তি করুন।’

এরপর আদালত বলেন, ‘আবেদনটি পরবর্তী কার্যদিবসে (১৫ জুলাই) আসবে। আজ শুনানি শুরু করুন।’

এ সময় দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘আপিল বিভাগ বলেছে শুনানি শুরু করতে। সুতরাং আজই শুনানি শুরু হোক।’

এরপর আদালত পেপারবুক নিয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের শুনানি শুরু করতে বলেন। পরে খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী আব্দুর রেজাক খান মামলার এফআইআর ও চার্জশিট অংশ পড়া শুরু করেন।

প্রথম দিনের শুনানি শেষে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার খালাস চেয়ে করা আপিলের শুনানি আগামী রবিবার (১৫ জুলাই) দুপুর ২টা পর্যন্ত মুলতবি করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এ মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আগামী ১৯ জুলাই পর্যন্ত বৃদ্ধি করেন আদালত।

এ বিষয়ে আরও জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেলের অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান বলেন, “মামলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যাবতীয় নথীপত্র একত্রিকরণকেই মূলত পেপারবুক বলা হয়। একটি পেপারবুকে একটি মামলার এ টু জেড সব তথ্য-উপাত্ত, দলিল-প্রমাণ একসঙ্গে সংযুক্ত থাকে। আর এই পেপারবুক হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা ও অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস মিলে প্রস্তুত করে থাকে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার ক্ষেত্রেও এমন একটি পেপারবুক প্রস্তুত হয়েছে। আমরা সে পেপারবুকের একটি কপি পেয়েছি। পেপারবুকে মামলার যাবতীয় নথি সংযুক্ত থাকার কথা। কিন্তু আমাদের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী (এজে মোহাম্মদ আলী) মনে করছেন, এই পেপারবুকে ‘আমাদের (মামলার আসামীদের পক্ষে) জন্য দরকার’ এমন কিছু পেপার মিসিং আছে। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে অথবা অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস থেকে হয়ত সে কাগজগুলো যুক্ত করা হয়নি।”

ব্যারিস্টার এহসান বলেন, ‘এর আগে গত ২৫ মে আমরা এ মামলার পেপারবুকের একটি কপি হাতে পাই। যেটি প্রায় ১২ হাজার পৃষ্ঠার। তাই এর কয়েকটি ফটোকপি করতেও আমাদের সময় লেগেছে। এরপর এত বড় পেপারবুক যথাযথ পর্যালোচনার জন্য সময় দরকার ছিল। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। তবে প্রাথমিকভাবে আমাদের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী ধারণা করছেন, আমাদের পক্ষে যায়, এমন অনেক কাগজ পেপারবুকে সংযুক্ত করা হয়নি। পেপারবুকের মধ্যে ওইসব কাগজ আদৌ আছে কিনা তা আমাদের খুঁজে দেখতে হবে। সে জন্য সময়ও প্রয়োজন। আদালতে এ বিষয়ে আবেদনও জানানো হয়েছে। আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী রবিবার (১৫ জুলাই) দিন নির্ধারণ করেছেন।’

প্রসঙ্গত, গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর কারাদণ্ডাদেশ দেন বিচারিক আদালত। রায় ঘোষণার পরপরই খালেদা জিয়াকে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি এখন সেখানেই আছেন।