ভূমি দস্যুদের দখলে যশোরের রাঘবপুর খাল

jessore mapনাজমুস সাকিব আকাশ, খাজুরা (যশোর): সরকারী খাল, খাস জমি দখলের মহোৎসবে মেতেছে ভূমি খেকোরা। যশোর-মাগুরা মহাসড়কে বাঘারপাড়া উপজেলার পুলেরহাট বাজারের পাশ দিয়ে বহমান সরকারী খাল অবৈধভাবে দখলে নিয়েছে ভূমি দস্যুরা। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড, প্রশাসন ও এলাকাবাসীকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে কতিপয় প্রভাবশালীরা খাল দখল উৎসবে মেতে উঠেছে। দখলের এই প্রতিযোগীতা চলতে থাকলে অনতিবিলম্বে এই খাল ভূমিগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। খাল দখলের প্রতিযোগীতা চলে আসলেও দেখার যেন কেউ নেই। ফলে দিন দিন বাড়ছে দখলের মাত্রা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার পুলেরহাট বাজার সংলগ্ন খাল পাড় ঘেসে গড়ে উঠেছে অবৈধ পাকা দোকান। এছাড়া খালের একটি বিরাট অংশ দখল করে পাকা বাড়ী ও ৪টি পুকুর খনন করা হয়েছে। এই পুকুর গুলোতে ব্যক্তিগতভাবে মাছ চাষ করা হচ্ছে। অনেকেই খাল থেকে মাটি ও মালি উত্তোলন করে বিক্রি করছে। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস নেই ভূক্তভোগীদের।

দখলদার রাঘবপুর গ্রামের গোপাল বিশ্বাসের পুত্র অসীম বিশ্বাস বলেন, পুকুরের কিছু অংশ খালের জমি থাকতে পারে। এভাবেই তো সবাই দখল করে খাচ্ছে। পত্রিকায় লিখলে কিছুই হবে না।

একই গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি গোলাম নবী বলেন, খালের পাড় ঘেসে যে পুকুর গুলো গড়ে উছেছে এগুলো খালের নিজস্ব সম্পত্তি। তাছাড়া দক্ষিণ পাড়ের যে সব পাকা দোকান গুলো গড়ে উঠেছে তার তিন ভাগের ২ ভাগই খালের সিমানার ভিতরে পড়েছে। এখনই এই খাল দখলদার মুক্ত না হলে অচিরেই খালের চিহ্ন বিলীন হয়ে যাবে।

এদিকে খাল পাড়ের মুদি দোকানদার মতিয়ার মন্ডল বলেন, প্রায় দোকানই খালের মধ্যে গড়ে উঠেছে। সরকারী জমি ভোগ দখলের জন্য কারও কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। খরস্রোতা চিত্রা নদী ও অত্র খালের দুই পাড়ে বিপুল সংখ্যক মৎসজীবি এই নদী ও খাল পাড়ের বিলের মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। বর্তমানে অবৈধ দখলের কবলে খালটি ছোট নালায় পরিণত হয়েছে। যার ফলে এই আর আগের মত মাছ ধরার সুযোগ নেই। এছাড়া এই খালকে কেন্দ্র করেই বাঘারপাড়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী খয়রার বিলের কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে সেচ ও বর্ষা মৌসুমে পানি প্রবাহের জন্য ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে বর্ষা মৌসুমে পানি প্রভাবে বাধা থাকায় বিলের অধিকাংশ ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। শুকনা মৌসুমে খালের গভীরতা ও প্রশ্বস্ততা কমে যাওয়ায় কিছু দিনের মধ্যেই পানি শুকিয়ে যায়। ফলে কৃষককের খাল থেকে পানি সেচের কোন ব্যবস্থা থাকেনা। দখলদাররা প্রভাবশালী হওয়ায় সাধারণ মৎসজীবি ও কৃষকেরা এদের হাতে জিম্মি।

এদিকে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামীর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, তাদের কাছে খালের জায়গা দখলের ব্যাপারে তথ্য রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। সেই সাথে সকল অবৈধ স্থাপনাও উচ্ছেদ করা হবে। এব্যাপারে সরকারের পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকার ভূক্তভোগীরা।