যেসব অপারেশনের পর চোখে ইনজেকশন নেওয়া লাগে

চোখের কিছু কিছু রোগের জন্য ইনজেকশন নিতে হয়। যেমন ডায়াবেটিসের কারণে অনেক সময় চোখে রক্তক্ষরণ হয়, এর প্রতিকারের জন্য চোখে ইনজেকশন নেয়ার প্রয়োজন হয়।

এ ব্যাপারে রাজধানীর ইস্পাহানী ইসলামিয়া আই ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হসপিটালের গ্লুকোমা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. তানিয়া রহমান ছড়া বলেন, আরও কিছু কিছু রোগ আছে যেগুলোতে হয়তো আমরা চোখে ইনজেকশন দিচ্ছি না, কিন্তু সেগুলোতে হাতের শিরায় ইনজেকশন দেয়া হয়। যেমন গ্লুকোমা রোগের ক্ষেত্রে চোখের প্রেসার যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে, তখন দেখা যাচ্ছে আমরা চোখের ড্রপ বা ট্যাবলেট দিয়েও চোখের প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। সেক্ষেত্রে হয়তো কিছু রোগীকে রক্তের শিরার মাধ্যমে ইনজেকশন দিয়ে চিকিৎসা করা লাগতে পারে।

যেসব অপারেশনের পর চোখে ইনজেকশন নেওয়া লাগে

সাধারণত ছানি অপারেশনের সময় কোনো ইনজেকশন দেয়া লাগে না। সেক্ষেত্রে ট্রপিক্যাল ড্রপ বা জেলের মাধ্যমে অপারেশন করা হয়। তবে অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রে যেমন গ্লুকোমা সার্জারির ক্ষেত্রে ইনজেকশন দিয়ে অপারেশন করতে হয়। তারপর রেটিনার অপারেশনগুলো ইনজেকশন দিয়ে করতে হয়।

গ্লুকোমা রোগীদের ড্রপ ব্যবহারের পদ্ধতি

ড্রপ ব্যবহার করার কিছু নিয়ম আছে। চারটা পর্যন্ত ড্রপ ব্যবহার করতে হয়। এক্ষেত্রে সময়টা মেইনটেইন করতে হবে। আপনি একটা ড্রপ নেয়ার ৫ মিনিট পর আরেকটি ড্রপ নিতে পারবেন। ড্রপ দেয়ার আরেকটি নিয়ম হল, আপনি চোখে ড্রপ দেওয়ার পর নাক চেপে ধরে ২ মিনিট শুয়ে থাকবেন। নাক চেপে ধরে রাখবেন যাতে নাক দিয়ে গলায় এই ড্রপের পানিটা চলে না যায়। এই নিয়ম ফলো করে ৫ মিনিট পরপর ড্রপ দিতে হবে, যে কয়টা ড্রপ চিকিৎসক দিতে বলেছেন।

গ্লুকোমা রোগীদের যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে

আমরা রোগীদের ফলোআপে রেখে তাদের চোখের প্রেসার, চোখের নার্ভের অবস্থাটা দেখে তাদের চিকিৎসা দিয়ে থাকি। তার চোখে ছানি পড়ে যাচ্ছে কিনা, সেটা দেখে সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে, আমরা তাদের ওষুধ দিয়ে থাকি। তাদেরকে নিয়ম অনুযায়ী ওষুধ সেবন করার নির্দেশনা দিয়ে থাকি। তাদেরকে ফলোআপে থাকার নির্দেশনা দিয়ে থাকি। গ্লুকোমার চিকিৎসা সাধারণত চলমান প্রক্রিয়া। এটাকে সময়মতো চিকিৎসা করাতে হবে।

গ্লুকোমায় নার্ভ নষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ওষুধের মাধ্যমে অথবা অপারেশনের মাধ্যমে নষ্টের পরিমাণটা কমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়। তাই রোগীর নিজের এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া খুবই প্রয়োজন। রোগীকে নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হবে, নিয়মিত ডাক্তারের কাছে চেকআপের জন্য আসতে হবে।

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অপারেশনের জন্য বলা হলে, সময়মতো তার জন্য প্রস্তুতি নিবেন। আরেকটি বিষয় বলব, যাদের ডায়াবেটিস এবং হাইপার টেনশন আছে, তারা অবশ্যই এই দুটি নিয়ন্ত্রণে রাখবেন। মেডিসিন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী, তারা ডায়াবেটিস এবং হাইপারটেনশনের চিকিৎসা করাবেন। কারণ এই দুটো জিনিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে চোখের সমস্যাও বেড়ে যাবে। এর ফলে গ্লুকোমা সমস্যাও বেড়ে যাবে।

বাচ্চাদের গ্লুকোমা রোগ যেভাবে নির্ণয় হয়

বাচ্চাদের ক্ষেত্রে গ্লুকোমা হলে তাদের মায়েরা বুঝতে পারেন। হঠাৎ করেই বাচ্চার দু’টি চোখ বড় হয়ে যায়। আবার অনেক সময় দেখা যায়, একটি চোখ বড় হয়। তখন মা বলেন, আমার বাচ্চার চোখের মনি বড় হয়ে যাচ্ছে, চোখ দিয়ে পানি পড়ছে,বাচ্চা রোদের দিকে তাকাচ্ছে না, মায়ের দিকে তাকাচ্ছে না। এ ধরনের লক্ষণ নিয়ে রোগীরা আমাদের কাছে আসে। যখনই রোগীরা আসেন ডায়াগনোসিস করার জন্য, তখন বাচ্চাকে অজ্ঞান করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি। যখন বুঝতে পারি এটি গ্লুকোমা, তখন আমরা অনেকগুলো প্যারামিটার আছে, সেগুলো ডায়াগনসিস করে দেখি যে হ্যাঁ এটি গ্লুকোমা।

বাংলাদেশে গ্লুকোমার চিকিৎসা

ডায়াগনোসিস করার পর পর গ্লুকোমা ধরা পড়লে, আমরা এটি অপারেশন করে ফেলি। এটি খুব ছোট একটি অপারেশন। আমাদের দেশে সব সার্জনরাই অপারেশনটি করে থাকেন। তাই দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। দেশে গ্লুকোমা পর্যাপ্ত চিকিৎসা রয়েছে।

সূত্র: ডক্টর টিভি