৬৯ এর ২২ জানুয়ারি, টুঙ্গিপাড়ার শেখ লুতফুন্নেছার কোলের খোকাকে দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধু উপাধি,খোকা হয়ে ওঠে বাঙালির শক্তি,বাঙালির সাহস,বাঙালির অনুপ্রেরণার বাতিঘর।
৭ই মার্চ ডাক দেন সংগ্রামের। মুক্তির সংগ্রামের। তর্জনী উচিয়ে বলেন এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।
তর্জনীর ভয়ে কাপতে থাকে হানাদার,কাপতে থাকে জালিম শাসকেরা। তার বজ্রকণ্ঠ প্রকম্পিত করে সেদিনের রেসকোর্স ময়দানের আকাশ বাতাস মাটি। হয়ে ওঠেন কোটি বাঙালির হৃদস্পন্দন। ঠিক ধরেছেন, কথা বলছি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে।
টুঙ্গিতে জন্ম নেওয়া সেদিনের সেই শিশু, ছোটো থেকেই যে ছিলো অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক আতঙ্কের নাম, দুর্নীতি বিরুদ্ধে প্রতিবাদের দেওয়াল সেদিনের সেই শিশু হয়ে ওঠেন বাঙালীর বিবর্তনের মহানায়ক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।৫২ তে ছাত্র ৭১ এ বাঙালির স্বাধীনতার কান্ডারী। তার তলোয়ার সম তর্জনী রুখতে পারেনি সেদিনের ইয়াহিয়া,ভুটো কিংবা কোনো পাক পরাশক্তি।স্পষ্ট ভাবে বলে দিয়েছিলেন তিনি প্রধানমন্ত্রীত্ব চান না, তিনি এদেশের মানুষের অধিকার চান,বাংলার স্বাধীনতা চান। ফাসির কাস্টে ঝুলতে চেয়েছেন,করেছেন অনশন, ১৩ বছর কাটিয়েছেন জেল জীবন, মহাকাব্য লিখেছেন কারাগারের রোজনামচায়। ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন হলো বাংলা, ৭২ রে ফিরলেন শেখ মুজিব, মাঠে নামলেন স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে৷ জনগনকে বানালেন পিপলস আর্মি।সেই সোনার বাংলার স্বপ্ন সারথিকে রুখে দিলো রাজনৈতিক কালো শক্তি, ২৩ বছরে যে ভুল করতে সাহস পাইনি পাক সরকার,যে তর্জনী মোকাবেলা করতে সাহস হইনি কোনো অপশক্তির, যে বজ্রকন্ঠ থামাতে পারেনি কোনো অত্যাচারী ঘাতক, সেই সোনার বাংলার কারিগরকে রুখে দিলো বিশ্বাসঘাতকের দল, লুতফুন্নেছা মারা যাওয়াই শেখ মুজিবের সামনের যে মাটিতে গড়াগড়ি দিয়েছিলো কান্নাই, সেই চিরচেনা মানুষেই বাংলার বুক থেকে মুছে দিলো সোনার বাংলার কান্ডারীকে,নিশ্চিহ্ন করতে গুলি চালালো শেখ পরিবাররের উপর। ইতিহাস থেকে মুছে দিতে চেয়েছিলো জাতির পিতার নাম। ১০ বছরের শিশু রাসেলের বুকে গুলে করতেও পিছু হাটেনি ঘাতকের দল, মৃত্যু নিশ্চিত করেই ক্যাম্পে ফিরলো হায়েনারা। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর ভবনটা পরিনত হলো রক্ত গঙ্গাই, চির নিস্তব্ধতার মাঝেও সেদিন তার চশমাটা যেন বলতেই থাকলো তোমরা আমার পিপলস আর্মি,নিজেরা উৎপাদন করে খেয়ো,তবুও দেশটাকে পাকিস্তান বানিয়ে দিয়োনা।স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ যেন থেমে না যায়।রেখে গেলেন কালো চশমাটা আর তার অসমাপ্ত আত্মজীবনী। বঙ্গবন্ধুর সেই আদর্শ বুকে নিয়ে তাই আজ বলতে চাই
মুজিবের শুধু দেহ মরেছে
মুজিব প্রতি বিজয়ে
মুজিব আজও বেচে আছে
কোটি বাঙালির হৃদয়ে।