যশোর জেলা ছাত্রদলের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহ-সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রাফার বিরুদ্ধে ধর্ষণ, অর্থ আত্মসাৎ ও ভিডিও ফাঁসের হুমকির অভিযোগ আনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নাটকীয় ভোলবদল ঘটালেন অভিযোগকারী নারী। যিনি একদিন আগেই কোতোয়ালি থানায় মামলা করে দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছিলেন, তিনিই পরদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে বললেন, সবই ছিল চাপের ফসল! অভিযোগে তিনি সরাসরি দায়ী করলেন যশোরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের নেতা বিএম আকাশ ও যুবদল নেতা মঞ্জুরুল হক সুমনকে। রোববার দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন। দাবি করা হয়, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন রাফা, আর তিনি হয়েছেন হাতিয়ার। তাদের প্রেমে যে ফাটল ধরেছিলো তা মীমাংশা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমি মাহিনুর আক্তার মাহি। বাড়ি কুমিল্লায়। ঢাকায় থেকে পড়াশোনা করেন। তিনি জানান, সাইফুল ইসলাম রাফার সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত ২৩ মে সন্ধ্যায় রাফাকে ‘সারপ্রাইজ’ দিতে তিনি হঠাৎ যশোরে আসেন। সন্ধ্যা সাতটা থেকে আটটার মধ্যে তিনি মনিহার এলাকায় পৌঁছান এবং রাফার বাসায় যান। তবে তিনি আগে থেকে রাফাকে কিছু জানাননি। বিষয়টি রাফা মেনে নিতে পারেনি। এরপর তিনি বাড়িতে ফিরে যাচ্ছিলেন। এমন সময় তাকে ফোন করে যুবদল নেতা সুমন। তাকে জানানো হয়, রাফা তাকে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করতে পারে। তাকে ধর্মতলায় একটি বাড়িতে নিয়ে যেতে চান। একই সাথে যশোরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক বিএম আকাশের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। অন্যথায় নানা হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়। তিনি ভয়ে কোতোয়ালি থানায় আশ্রয় নেন। এরপর বিএম আকাশ ও সুমন তার সাথে কথা বলেন। বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে রাফার বিরুদ্ধে মামলা করাতে বাধ্য করেন। কোতোয়ালি থানা পুলিশও তাদের সাথে যোগ দেন। এক পর্যায়ে চাপের মুখে পড়ে তিনি রাফার বিরুদ্ধে মামলা করতে বাধ্য হন। যার কলকাঠি নাড়েন বৈষম্যবিরোধী নেতা বিএম আকাশ ও সুমন।
তিনি দাবি করেন, রাফার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জেরে যুবদল নেতা সুমন ও বৈষম্যবিরোধী নেতা বিএম আকাশ তাকে ব্যবহার করেছেন। সর্বশেষ তিনি বলেন, রাফার সাথে তার প্রেম ছিল, আছে এবং থাকবে। সংবাদ সম্মেলনে রাফার ছোট বোন সাদিয়া সুলতানাও উপস্থিত ছিলেন এবং মাহির বক্তব্যের পক্ষে সহমত পোষণ করেন।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক বিএম আকাশ বলেন, তিনি দুই দিন যশোরে ছিলেন না। এ বিষয়ে সরাসরি দেখাও হয়নি। মূলত তিনি জানতে পারেন, একজন নারী সমস্যায় পড়েছেন। তিনি সহযোগিতা চান। যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করেছেন। তবে মামলা করতে বাধ্য করা হয়েছে, এটা মিথ্যা। এ বিষয়ে তিনি নিজেও সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানান।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ আবুল হাসনাত জানান, বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় গুরুত্বের সাথে নেয় কোতোয়ালি থানা পুলিশ। তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও দেখায়। এছাড়া ওই নারীর পাশে দাঁড়ান সুমন, আকাশ ছাড়াও অনেকে। তাকে মেডিকেল চেকআপ করানো হয়। প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়ায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তদন্তাধীন বিষয়ে তিনি এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, শনিবার মামলায় ওই নারী উল্লেখ করেন, ২০২২ সালে রাফার সাথে ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। গত বছরের ৫ অক্টোবর তিনি ঢাকা থেকে যশোরে আসেন। রাফা বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ করে তাকে। পরবর্তীতে সেই ভিডিও ও ছবি ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ওই তরুণীর কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে ৮ লাখ ১০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে। এক পর্যায়ে বৃহস্পতিবার রাতে তিনি যশোরে এসে রাফার বাড়িতে যান। রাফা সব কিছু অস্বীকার করেন, এমনকি নানা হুমকি দিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। বাধ্য হয়ে তিনি মামলা করেন। পরের দিন রোববার সংবাদ সম্মেলণ করে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাকে মামলা করতে বাধ্য করা হয়েছে। যার নেপথ্যে রয়েছেন সুমন ও বিএম আকাশ