ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্তে উদ্বেগ ঢাকায়

ministry of foring affair dhaka bangladeshডেস্ক রিপোর্ট: জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে বৃহত্তর বাণিজ্যিক সহযোগী কানাডা, মেক্সিকো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) স্টিল এবং অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক আরোপে মার্কিন প্রশাসন যে আচমকা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে নড়েচড়ে বসেছে ঢাকা। ওয়াশিংটনের ওই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ সরাসরি আক্রান্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও এর পরোক্ষ প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে ঢাকার।

এ নিয়ে গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক বিষয়াবলি দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত অনুবিভাগের তরফে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে- বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে বাইপাস করে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন তাদের দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক এবং বাণিজ্যিক মিত্রদের বিরুদ্ধে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটি বিশ্ববাণিজ্যে প্রভাব পড়বে। আমেরিকা যদি এ সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা না করে তা হলে এটি একটি নেতিবাচক উদাহরণ হিসাবে থেকে যাবে। তাদের দেখাদেখি বিভিন্ন দেশ তাদের প্রতিবেশী বা প্রতিপক্ষ দেশের প্রতি এমন সিদ্ধান্ত নিতে থাকবে।

মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবুর রোজ সমপ্রতি সাংবাদিকদের জানান, ‘আমদানিকৃত স্টিলের ওপর ২৫ ভাগ এবং অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ১০ ভাগ কর শুল্ক আরোপ করে হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা একভাবে কানাডা ও মেক্সিকো এবং আরেকভাবে ইইউর সঙ্গে সমঝোতা করার লক্ষ্যে কাজ করে যাব। কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে উত্তর আমেরিকা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি-নাফটা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা চলছে। ইউরোপের সঙ্গেও কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে তবে তা যথেষ্ট নয়।’

ট্রাম্প প্রশাসনের ওই সিদ্ধান্তে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট জেন-ক্লদ ঝাঙ্কার এই সংবাদকে ‘অগ্রহণযোগ্য, বদ্ধ বাণিজ্যিক নীতি, এবং দীর্ণ পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেন। তিনি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রকে এর উপযুক্ত জবাব দেয়ার ঘোষণাও দেন। আর এই শুল্কারোপ যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরের প্রতিবেশীদের সঙ্গে করা নাফটা চুক্তিরও বিরোধী। বিশ্ববাণিজ্য যুদ্ধের এই সময়ে ট্রাম্পের এই শুল্কারোপ আটলান্টিকের উভয় পাড়েই বিরূপ প্রভাব ফেলবে। স্টিলে শুল্ক আরোপে যুক্তরাষ্ট্র কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন এমন ধারণা ছিল আগে থেকেই।
এরই প্রেক্ষিতে চীনের তরফে আগাম জানানো হয়- বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক উত্তেজনা এড়িয়ে চলতে চায়। সেই সঙ্গে বেইজিংয়ের মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্তের বিষয়টিও বিবেচনা করার কথা জানায়।

যদিও দুই দিন আগেই মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস চীনের ওপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছিল। চীনও ওইদিন পাল্টা আঘাত হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর কোটি কোটি ডলারের শুল্কারোপের হুমকি দেয়। তবে বুধবার বেইজিংয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা যে কোনো প্রকার বাণিজ্যিক যুদ্ধ এড়ানোর বিষয়ে মত দেন। মার্চে ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে স্টিল এবং অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্কারোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, ‘দশকের পর দশক ধরে আমাদের শিল্প অন্যায্য বিদেশি বাণিজ্যিক সমঝোতার শিকার। এটি বন্ধ করতে হবে।’

সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকদের পর্যালোচনা সভায় যে ক’টি বিষয় মোটা দাগে ওঠে এসেছে তা হলো- মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলে কানাডা, ইইউ এবং মেক্সিকোর স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম বিশ্বের অন্য দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়বে। এতে উৎপাদনকারী অন্যান্য দেশের কারখানার ওপর প্রভাব পড়বে। দ্বিতীয় বৈশ্বিক বাণিজ্য সংস্থা ডব্লিউটিওকে বাইপাস করে নিষেধাজ্ঞার কারণ হিসাবে জাতীয় নিরাপত্তাকে জুড়ে দেয়া। এটিই উদ্বেগের সবচেয়ে বড় কারণ। যুক্তরাষ্ট্রের বড় মিত্র কানাডা ও ইইউ। ন্যাটো বাহিনীতে তারা একসঙ্গে রয়েছে। কিন্তু ওই কানাডা ও ইইউ’র পণ্যের মধ্যে ওয়াশিংটন জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা দেখছে! তৃতীয় যে বিষয়টি এসেছে তা হলো- বিশ্ববাণিজ্য সংস্থাকে বাইপাস করে প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো যদি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সিদ্ধান্ত নিতে থাকে বিশেষ করে শুল্ক আরোপের খড়গ যদি নেমে আসে তা হলে এক সময় ওই বিশ্ব ফোরাম অকার্যকর হয়ে পড়বে। বাণিজ্যে ভারসাম্যের জন্য বৈশ্বিক ফোরামগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা জরুরি। চতুর্থ হচ্ছে- প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জলবায়ু তহবিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। নাফটা থেকে বের হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এটি চলতে থাকলে ট্রাম্প এক সময় ডব্লিউটিও থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। পঞ্চম এবং সর্বশেষ ঢাকার মূল্যায়ন হচ্ছে- বিশ্ব বাণিজ্য বাড়ছে। গত বছর ৪.৭ ভাগ বেড়েছে। এবার ৪.৪ ভাগ বাড়বে। আর ২০১৯ সালে সেটি আরো ৪ ভাগ বাড়ার প্রাক্কলন করা হয়েছে। কিন্তু শুল্ক আরোপ বা বাণিজ্য নিয়ে দেশগুলোর মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা হলে সেটি বাড়বে না, বরং কমবে। বিশ্ব বাণিজ্য কমলে বাংলাদেশের রপ্তানিও কমে যাবে! আর বিশ্ব মন্দা হলে তো প্রবাসে থাকা বাংলাদেশিরা কর্ম হারাবে, রেমিটেন্সও কমে আসবে।