ধৈর্য ধরুন, উপযুক্ত সময়ে কর্মসূচি দেয়া হবে: মওদুদ

ঢাকা: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ দলের নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘আর কিছুদিন ধৈর্য ধরুন। উপযুক্ত সময়ে কর্মসূচি ও কঠোর আন্দোলন করা হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্বের কোনো স্বৈরাচার সরকারকে কেউ ভদ্র আন্দোলন করে ক্ষমতায় থেকে নামাতে পারে নাই। তাদের ক্ষমতা থেকে নামাতে উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত আন্দোলন করতে হবে।’

আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরামের আয়োজনে ‘বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ড ও মৌলিক অধিকার’ শীর্ষক গোল টেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আজকে আমার এলাকায় যাব বলে পুলিশ তিন দিন আগে থেকে নেতাকর্মীদের ধরার জন্য রেট দেয়া শুরু করেছে। কিন্তু হয়তো আর দুই তিন মাস পরে যখন যাব তখন এই পুলিশই আমি যেন ভালোভাবে যেতে পারি সেই ব্যবস্থা করে দিবে।

মওদুদ বলেন, ‘এটা হবে, হতে বাধ্য। এমন একটা সময় আসবে যখন এই সরকার বুঝতে পারবে যে, তাদের আর ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নেই। তাদের কোনো ভবিষ্যৎ নাই। স্পেসিফিকভাবে বলতে পারিনা। তবে আর কিছুদিন অপেক্ষা করুন। ধৈর্য ধরুন। উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত কর্মসূচি দেয়া হবে। সেই কর্মসূচি কঠোর কর্মসূচি হবে। এটা কোন নরম বা ভদ্রলোকের অশান্তিপূর্ণ কর্মসূচি হবে না।’

তিনি বলেন, ‘কারণ আমরা জানি কোনো ফ্যাসিবাদী সরকার ও স্বৈরাচারী সরকারকে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে উৎক্ষাত করা যায় না। পৃথিবীর কোথাও সম্ভব হয়নি, আমাদের দেশেও সম্ভব না। ১৯৬৯ সালের আন্দোলন ও ১৯৯০ সালের আন্দোলন এগুলো সবই জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী হয়েছে। সংবিধান মানুষের মঙ্গলের জন্য। সুতরাং সংবিধান কখনো বাধা হবে না। বর্তমান সরকার বলে সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। মোটেও না। জনগণ যেভাবে চাইবে সেভাবেই নির্বাচন হবে।’

মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আজকে মাদক বিরোধী অভিযানের নামে বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ড হচ্ছে। আমরা ক্ষমতায় আসলে প্রতিটি হত্যার জন্য অনুসন্ধান করব। প্রতিটি হত্যার বিচার করা হবে। রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে তাকে ধরে নিয়ে মাদক ব্যবসায়ী বলে হত্যা করা হল। কে সিদ্ধান্ত দিল সে মাদক ব্যবসায়ী। কোনো আদালত কি বলেছে? কোনো আদালতে কি তার বিচার হয়েছে? এই অভিযানের নামে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নির্মূল করা হচ্ছে। আমরা বিভিন্ন এলাকা থেকে খবর পাচ্ছি বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ি গিয়ে পুলিশ হামলা করছে।’

মওদুদ আহমেদ আরো বলেন, ‘২০১৮-১৯ অর্থ বছরের বাজেট হলমার্ক থেকে শুরু করে ব্যাংকগুলোতে লুট শুরু হয়েছে। এখন ব্যাংকে তারল্য সংকট চলছে। আমরা দেখেছি সরকারের পক্ষ থেকে টাকা দিয়ে হেল্প করা হচ্ছে। আজকে ব্যাংক খাতে চরম সংকটে রয়েছে। অথচ ব্যাংকিং কমিশন গঠন করার ব্যাপারে বাজেটে কোনো নির্দেশনা নেই। জনগনের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেনি। ব্যাংকের মালিককে সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। সাধারণ দরিদ্র মানুষের জন্য কিছু রাখা হয়নি। এটা ধনিকে ধনি করা আর গরীবকে আরো গরীব করার বাজেট।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের নেত্রী আজ কারাগারে। তার জামিন নিয়ে তাল বাহানা করছে। আমি কোনদিন শুনিনি জামিনের বিরুদ্ধে লিভ দেয়া হয়। আবার জামিন বিলম্বিত করার জন্য দেরি করে তারিখ দিচ্ছে। তিনি বলেন, যতোই বিলম্বিত করুন। জামিন হবে। এটা মানুষের মৌলিক অধিকার। যেদিন খালেদা জিয়া বের হবেন সেদিন কি হবে সেই ভয়ে ভীত সরকার। সরকার জানে খালেদা জিয়া বের হলে কি হবে। তিনি বের হলে আমরা আর ২০ দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকব না। দেশের যতো গণতান্ত্রিক শক্তি আছে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।’

নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরামের উপদেষ্টা হাজী মো. মাসুক মিয়ার সভাপতিত্ব ও সাধারণ সম্পাদক এম জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, ওলামা দলের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা শাহ মো. নেসারুল হক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সহ সভাপতি ফরিদ উদ্দিন প্রমুখ।