বিএনপি লর্ড কার্লাইলকে দিল্লিতে এনে খালেদা জিয়ার পক্ষে লবিং করাতে চায়

Lord Carlisleডেস্ক রিপোর্ট: দিল্লিতে এসে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে লবিং করতে চলেছেন প্রখ্যাত ব্রিটিশ আইনজীবী ও হাউস অব লর্ডসের সদস্য লর্ড কার্লাইল। ঢাকা থেকে বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা ও খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এসে তার সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। দিল্লির সাউথ এশিয়া ফরেন করেসপন্ডেন্টস ক্লাবকে (এফসিসি) সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

খালেদা জিয়াকে যে অভিযোগে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, তাকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আখ্যায়িত করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কাছে তুলে ধরতে লর্ড কার্লাইল বেছে নিয়েছেন এফসিসি’কে। জানা গেছে, দিল্লির মথুরা রোডে অবস্থিত এই এফসিসি-র মিলনায়তনেই আগামী ১৩ জুলাই, শুক্রবার লর্ড কার্লাইল ও বিএনপি নেতাদের সংবাদ সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

যদিও লর্ড কার্লাইলের ভিসা শেষ মুহূর্তে প্রত্যাখ্যাত হতে পারে, এই আশঙ্কার পটভূমিতে ওই সাংবাদিক সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণলিপি এখনও সংবাদমাধ্যমের কাছে পাঠানো হয়নি।

এর আগে ফেব্রুয়ারির গোড়ার দিকে খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার কিছুদিন পরেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকায় ঘোষণা করেন, লর্ড কার্লাইলকে তাদের নেত্রীর আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। এই ‘নিয়োগ’ যে লন্ডনে নির্বাসিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আগ্রহে ও নির্দেশেই, সে কথাও অবশ্য গোপন ছিল না।

আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ করা হলেও লর্ড কার্লাইল যে বাংলাদেশের আদালতে হাজির হয়ে খালেদা জিয়ার হয়ে সওয়াল করতে পারবেন না, বিএনপির অবশ্য তা জানাই ছিল। এর আগে জামায়াতে ইসলামী যখন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া তাদের নেতাদের হয়ে সওয়াল করার জন্য লন্ডনের সুপরিচিত ব্যারিস্টার টোবি ক্যাডম্যানকে নিয়োগ করেছিল, তখন তাকেও বাংলাদেশে এসে সওয়াল করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। এমনকী তিনি ঢাকায় আসার জন্য ভিসাও পাননি।

লর্ড কার্লাইলের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটতে পারে, এটা ধরে নিয়েও তারেক রহমান এই নিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছেন। তার বিশ্বাস ছিল, খালেদা জিয়ার হয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে লর্ড কার্লাইল মুখ খুললে তা অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য হবে। কারণ এই বিখ্যাত আইনজীবীর কথার একটা আলাদা ওজন আছে। সোজা কথায়, ঠিক আইনজীবী না-হলেও আন্তর্জাতিক মঞ্চে তার ভূমিকা হবে একজন ‘লবিয়িস্টে’র।

নিয়োগের কিছুদিন পরেই লর্ড কার্লাইল আল জাজিরার সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে একটি সাক্ষাৎকারও দেন। যেখানে তিনি ব্যাখ্যাও করেন কেন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ রাজনৈতিক কারণে সাজানো বলে তিনি মনে করছেন।

এখন লর্ড কার্লাইল যে ঢাকায় আসতে পারবেন না, সেটা মোটামুটি নিশ্চিত। কাজেই খালেদা জিয়ার হয়ে সওয়াল করার জন্য বেছে নিয়েছে ঘরের পাশে দিল্লিকে। ভারত যে একজন প্রবীণ ও সিনিয়র ব্রিটিশ এমপি-র ভিসা প্রত্যাখ্যান করবে না, এটা ধরে নিয়েই দিল্লিকে ভেন্যু হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে দলের একজন সিনিয়র নেতা এই প্রতিবেদকে জানিয়েছেন।

সেই সঙ্গেই সংবাদ সম্মেলনকে আরও ‘ওজনদার’ করে তুলতে ঢাকা থেকে বিএনপি-র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও আইনজীবী নেতাদের দিল্লিতে নেওয়ারও পরিকল্পনা চলছে।

গত মাসেই দিল্লিতে বিএনপি-র তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলের সফর নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের গণমাধ্যমে তুমুল চর্চা হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে—তার মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ব্রিটিশ এমপি লর্ড কার্লাইল ও অন্য সিনিয়র নেতাদের সেই দিল্লির বুকে হাজির করে আবার একটা তোলপাড় ফেলার চেষ্টা করছে সংসদের বাইরে থাকা এই বিরোধী দল!