হজে এবার বিমানের সরাসরি ফ্লাইট, মিস করলে জরিমানা

ডেস্ক রিপোর্ট: হজ গমনেচ্ছুদের পরিবহনে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে। আগামী ১৪ জুলাই থেকে ফ্লাইট শুরু হবে। বিমান এবার ১৫৫টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ফিরতি ফ্লাইট থাকবে ১৪৩টি। এবারই প্রথম ঢাকা থেকে সরাসরি মদিনায় ফ্লাইট পরিচালনা করবে বিমান। তবে অতীতের অভিজ্ঞতায় কঠোর হচ্ছে তারা। প্রতিবার নির্ধারিত ফ্লাইটে যাত্রী না পাওয়ায় লোকসান গুণতে হয়। এবার কেউ নির্ধারিত ফ্লাইটে না গেলে জরিমানা গুণতে হবে।

বিমান সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে এবার ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন পবিত্র হজ পালনের জন্য সৌদি আরবে যাবেন। এর অর্ধেক ৬৩ হাজার ৫৯৯ জন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বহন করবে। বাকি যাত্রী বহন করবে সৌদিয়া এয়ারলাইন্স।

সূত্রটি জানায়, বিমানের ৬৩ হাজার ৫৯৯ যাত্রী ছাড়াও সরকারি ডেলিগেট ও অন্যান্য মিলিয়ে সাড়ে ৬৪ হাজার যাত্রী বহন করতে হবে।

আগামী ১৪ জুলাই থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মোট ১৫৫টি ফ্লাইট সৌদি আরবের জেদ্দা ও মদিনায় যাবে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইটগুলো হবে। এর মধ্যে সিলেট থেকে জেদ্দা সরাসরি ৩টি এবং চট্টগ্রাম থেকে ৯টি ফ্লাইট পরিচালিত হবে। চট্টগ্রাম থেকে জেদ্দা ৬টি এবং চট্টগ্রাম থেকে মদিনায় ৩টি ফ্লাইট থাকবে। আর বাকি ১৪৩টি ফ্লাইটে ঢাকা থেকে যাত্রী বহন করা হবে।

এর মধ্যে এবারই প্রথম ঢাকা থেকে মদিনায় মোট ৫টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। আর ১৩৮টি ফ্লাইট ঢাকা থেকে জেদ্দায় যাবে।

বিমান ২৫ আগস্ট থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৪৩টি ফিরতি ফ্লাইট পরিচালনা করবে। এই বিপুল সংখ্যক যাত্রী বিমানের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইয়ার নিজস্ব ফ্লাইটে বহন করবে। এজন্য নিয়মিত রুটে বিমানের শিডিউলে যাতে বিঘ্ন না ঘটে, সেজন্য গত জানুয়ারিতে চারটি অতিরিক্ত উড়োজাহাজ ভাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

ইতোমধ্যে বিমান বাংলাদেশ মালেয়েশিয়ার ফ্লাই গ্লোবাল সংস্থার কাছ থেকে তিনটি উড়োজাহাজ ভাড়ায় নিয়ে এসেছে। হজ ফ্লাইট পরিচালনার দুই সপ্তাহ বাকি থাকলেও বিমানের অন্য উড়োজাহাজটি ভাড়া চূড়ান্ত হয়নি। তবে বিমান আশাবাদী, নির্ধারিত সময়ের আগেই এটি ভাড়া করা হয়ে যাবে।

বরাবরই হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) অভিযোগ থাকে, তাদের যাত্রী যখন কম থাকে, তখন বিমানের ফ্লাইট বেশি হয়। আবার তাদের যাত্রী যখন বেশি থাকে, তখন বিমানের ফ্লাইট কম থাকে।

এ বিষয়ে বিমান কর্তৃপক্ষ বলছে, কবে, কখন কোন হজ ফ্লাইট যাবে অন্যান্য দেশের সঙ্গে সমন্বয় করে দুই মাস আগে থেকেই শিডিউল বা স্লট ঠিক করে দেয় সৌদি আরব সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। কারণ, সারা বিশ্বের লাখ লাখ মুসলমানরা সেখানে পবিত্র হজ করতে যান।

বিমান কর্তৃপক্ষের দাবি, একইভাবে তাদের আগে থেকে শিডিউল ঠিক করে দিয়েছিল, সেই শিডিউল প্রতিটি হজ এজেন্সির কাছে পৌঁছে দেয়াও হয়েছিল। যাতে করে তারা বিমানের শিডিউল হিসেবে যাত্রীদের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারে।

এদিকে, প্রতিবার হজের সময় যাত্রীরা ফ্লাইট মিস করেন, যার কারণে আসন ফাঁকা রেখেই ফ্লাইট পরিচালনা করতে হয়। এতে করে বিমানের ক্যাপাসিটি লস হয় এবং লোকসান গুণতে হয়। অনেক সময় আবার ফ্লাইট বাতিল করতে হয়। তাই বিমান আগেভাগেই এবার টিকেট কাটার ব্যবস্থা করেছে। ইতোমধ্যে ১ জুলাই পর্যন্ত ৬০ শতাংশ টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। তারা আশা করছেন, ১৪ জুলাই ফ্লাইট শুরুর আগেই সমস্ত টিকেট বিক্রি হয়ে যাবে।

এছাড়া কোনো যাত্রী যদি নির্ধারিত ফ্লাইট পরিবর্তন করতে চান, সেক্ষেত্রে তাদের একশ’ মার্কিন ডলার জরিমানা দিতে হবে। এমনকি কেউ যদি টিকেট বাতিল করতে চান, তাকেও দুইশ’ ডলার জরিমানা দিতে হবে।

বিমান সূত্র বলছে, গত বছর সৌদি সিভিল এভিয়েশন নির্ধারিত স্লট বা শিডিউল ফ্লাইটের পরেও অনেকে যেতে না পারায় তারা অতিরিক্ত শিডিউল দিয়েছিল। তবে সৌদি আরব এবার জানিয়ে দিয়েছে, অতিরিক্ত কোনো শিডিউল দেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।

তাই বিমান মনে করছে, যদি কোনো যাত্রী নির্ধারিত ফ্লাইটে যেতে না পারেন, পরে তাদেরকে পাঠানো কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, ‘হজ গমনেচ্ছুদের বহনে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। হজ এজেন্সিগুলোকেও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আশা করছি, এবার হজ ফ্লাইট নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।’

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘সৌদি আরবে বাসা ভাড়ার কাজ চলছে। এজেন্সিগুলোর দিক থেকেও সব প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আশা করি, বিগত বছরের মতো এবার এত বেশি সমস্যা হবে না।’